ফেলনা রয় কৃষ্ণ! আসন্ন ISL’এ অশনি সংকেত দলগুলোর কাছে

রয় কৃষ্ণ এই নামটা ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে এখন হট কেক৷ অস্ট্রেলিয় লিগের ক্লাব দল ওয়েলিংটন ফিনিক্স থেকে ২০১৯-২০ সিজনে ATK এফসি দলে যোগ দেন স্ট্রাইকার…

roy krishna bengaluru fc

রয় কৃষ্ণ এই নামটা ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে এখন হট কেক৷ অস্ট্রেলিয় লিগের ক্লাব দল ওয়েলিংটন ফিনিক্স থেকে ২০১৯-২০ সিজনে ATK এফসি দলে যোগ দেন স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণ (Roy Krishna)। শুরু হয় ভারতীয় ফুটবলে রয় কৃষ্ণর দাপট। টানা তিন মরসুম জুড়ে(২০১৯-২০, ২০২০-২১,২০২১- ২২) কলকাতার ATK এফসি এবং মোহনবাগানের সঙ্গে মার্জ করার পর ATK মোহনবাগান জার্সিতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ(ISL), AFC কাপের গ্রুপ পর্বে রয় কৃষ্ণর পারফরম্যান্স যেকোনো স্ট্রাইকারের কাছেও ঈর্ষণীয়।

এই সময়কালে গোল করে এবং গোল করিয়ে ভারতীয় ফুটবলের সবুজ গালিচা জুড়ে প্রতিপক্ষ দলের কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন ফিজিয়ান ‘গোল্ডেন বয়’ রয় কৃষ্ণ। সবুজ মেরুন জার্সি গায়ে বল পায়ে রয়ের প্রতিটি মুভ হয়ে উঠেছিল শিল্পী ফুটবলের সেরা বিঞ্জাপন। রয় কৃষ্ণকে আটকানোর সমস্ত জারিজুরি মাঠে মারা যাচ্ছিল। সবুজ মেরুন জার্সি গায়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে হাইভোল্টেজ ডার্বি ম্যাচে গোল এক লহমায় কৃষ্ণ বাশির সুরে মেতে উঠেছিল বাগান জনতা। পারফরম্যান্সের জোরে বাগানে একের পর এক ফুল ফুটিয়ে নয়নের মনি হয়েও উঠেছিলেন রয় কৃষ্ণ।

কিন্তু সব শুরুর একটা শেষও আছে। পারফরম্যান্সের রোশনাই ২০২১-২২ মরসুমে এসে ক্রমশই দ্যুতি হারিয়ে ফেলতে থাকে। যে রয় কৃষ্ণকে বিগত তিন মরসুমে বোতলবন্দি করতে পারেনি প্রতিপক্ষ ক্লাব দলেরা ৯০ মিনিটের ফুটবল লড়াই’তে, এবার তারাই রয় কৃষ্ণ’র তোর খুজে বের করে আনলেন। কড়া মার্কিং তো ছিল, সঙ্গে নিজের খেলার স্টাইলের বদল না ঘটানো এবং ইনজুরি ধীরে ধীরে সবুজ গালিচাতে কৃষ্ণ বাশির তেজ ম্রিয়মাণ হয়ে পড়লো। এক্ষেত্রে আন্তোনিও লোপেজ হাবাস থেকে হুয়ান ফেরান্দো সময়কালে রয় কৃষ্ণ’কে নিয়ে কোচদের ফুটবল বোধ অনেকটাই দায়ী রয়ের পারফরম্যান্সে ভাটা আসার ক্ষেত্রে। কোনও আড়াল বা ঢাল না রেখে এক্কেবারে লড়াই’র মাঠে প্রতিপক্ষের মুখে সটান ছুঁড়ে ফেলা দেওয়ার ফুটবল দর্শন কোচেদের স্পষ্টতই ধরা পড়ে।

গত আইএসএলের দ্বিতীয় লেগের ডার্বি ম্যাচের শেষ ৩৬ মিনিটে মাঠে নেমে জামশিদ পুত্র কিয়ান নাসিরির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের(এসসি ইস্টবেঙ্গল) বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ছিল এককথায় ‘তাণ্ডব’। এই তাণ্ডবের পরেও কিয়ান নাসিরিকে ইচ্ছে করেই ATK মোহনবাগানের প্রথম একাদশে রাখা হয়নি। কারণ, জামশিদ পুত্রকে লম্বা রেসের জন্য ব্যবহার সঙ্গে সারপ্রাইজ অ্যাটাকার হিসেবে কিয়ান নাসিরিকে নামিয়ে জয়ের জন্য গোলের ঝড় তোলার কৌশল হিসেবে। কিন্তু রয় কৃষ্ণকে টানা তিন মরসুমে একেবারে খাদের তলায় ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে কোনও ঢাল না দিয়ে।

ফলে রয় কৃষ্ণ যত খেলেছে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে যত বেশি সময় গড়িয়েছে তত বেশি করে প্রতিপক্ষ দল জল মেপে নিয়ে কৃষ্ণ বধের ছক কষেছে নিখুঁত পরিকল্পনা করে।আর রয় কৃষ্ণ নিজেও নিজের ফুটবল নিয়ে ‘Careless’ ছিল বলতেই হয়। সময়ের গড়ানোর সঙ্গে নিজের ফুটবল চিন্তায় কোনও বদল ঘটায় নি। বদল না ঘটানোর খেসারৎ আখেরে দিতে হয়েছে রয় কৃষ্ণকেই। পারফরম্যান্সের পড়তি রেজাল্টকে হাতিয়ার করেই ATKমোহনবাগান ২০২২-২৩ ফুটবল মরসুমে ছেঁটে ফেলে দিয়েছে ফিজিয়ান ফুটবল স্টারকে।

তবে রয় কৃষ্ণ ফুরিয়ে যায়নি, এখনও তার মধ্যে ফুটবল বাকি আছে, ফুটবলকে দেওয়ার আছে তা সদ্য সমাপ্ত ডুরান্ড কাপে বেঙ্গালুরু এফসির (BFC) হয়ে রয় কৃষ্ণর সামগ্রিক পারফরম্যান্সের দিকে চোখ রাখলে আসন্ন আইএসএল টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষ দলের কাছে অশনি সংকেত। কেননা,BFC’তে গিয়ে রয় কৃষ্ণএ অনেকটাই চাপমুক্ত। অনেক বেশি খোলা মনে থাকার কারণে রয় কৃষ্ণ ফুটবল নিয়ে নিজের চিন্তা এবং বোধ এর সঙ্গে ফুটবল স্টাইলে বদল ঘটাতে পেরেছে।

আর রেজাল্ট হাতেনাতে। কলকাতায় এসে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সবুজ গালিচাতে ফুটবল ঝলক দেখিয়েছে রয় কৃষ্ণ। টিম ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টাইটেলশিপে রয় কৃষ্ণ’র পারফরম্যান্স দেখে সবুজ মেরুন টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেদ শুরু করে সমর্থকরা আঙুলের নখ খুঁটছে। অন্যদিকে, ফিজিয়ান ফুটবলার রয় কৃষ্ণ কলকাতায় এসে BFC দলের হয়ে নিজের পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়ে ATK মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সবুজ মেরুন সমর্থকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে, যে সমর্থকদের একাংশ বলেছিল রয় কৃষ্ণ’র ফুটবলকে দেওয়ার আর কিছু নেই, ও ফুরিয়ে গিয়েছে।