মে মাস, এই মে মাস মানেই ঘূর্ণিঝড়ের (Cyclone) আশঙ্কা বেশি। আয়লা ফণি, আম্ফান এমনকি ইয়াশও এই মে মাসেই আসছে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের দিকে।
বঙ্গোপসাগরের ঘূূর্ণিঝড়ের প্রথম ধাক্কা লাগে দুই দেশের মধ্যে ছড়ানো সুন্দরবন। গত কয়েকটি তেমন ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা।
পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ছড়িয়ে সুন্দরবনের একাংশ। এখানে কারণ মাটির তৈরি নড়বড়ে বাঁধ ভাষা। আম্ফান ও ইয়াশে এই নড়বড়ে বাঁধ কখনো ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁর মতো ব্লকে এই নড়বড়ে বাঁধের কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
মাত্র এক থেকে দেড় মিটার চওড়া এই বাঁধ গুলি মূলত তৈরি হয় মাটি, বাঁশ ও মাটির বস্তা দিয়ে। যা ক্ষণিকের জন্য জলকে ঠেকালেও ঝড়ের সময় প্রবল জলোচ্ছাসকে ঠেকাতে সক্ষম নয়। এবারেও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। আসছে ঘূর্ণিঝড়। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর।
বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ছোট ও বড় কলাগাছীর মত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর পাড়ে যে মাটির কাঁচা বাঁধগুলি রয়েছে সেগুলির অবস্থা খুবই শোচনীয়।
সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের ন্যাজাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদ্যাধরী নদী পাড়ের মানুষরা জানাচ্ছেন, গতবছর ইয়াশ ও ইয়াশ পরবর্তী ভরা কোটালের জেরে বাঁধ ভেঙে তাদের পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল। ঘর বাড়ি চলে গিয়েছিল জলের তলায়। শেষ সম্বলটুকু নিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন নিকটবর্তী একটি হাইস্কুলে। বছরের পর বছর কেটে গেলেও তাদের বাঁধের অবস্থার পরিবর্তন হয়না।
তারা জানাচ্ছেন, সরকারের তরফে ঝড়ের ঘোষণা হলে কিছু বাঁশ ও মাটি দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ করা হলেও সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর নদীগুলির ঝড়ো হাওয়ায় সেসব ক্ষনিকের সান্ত্বনা। সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে চলে যায় নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস।
নতুন এই ঘূর্ণাবর্তের খবর পাওয়ার পর তারা বাঁধের উপরে রাত জাগতে শুরু করেছেন। এই ছবি শুধুমাত্র মাত্র ন্যাজাটের নয়। সেহেরা-রাধানগর, দক্ষিণ কালিনগর, ভান্ডারখালি, সর্দারপাড়া, তুষখালী, জেলিয়াখালী, হেমনগর, মামুদপুর ও বামুনপুকুরেও একই ছবি।
কখন ধেয়ে আসবে প্রবল জলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে চলে যাবে তারি প্রহর গুনছেন নদীর পাড়ের মানুষরা। যদিও তারা এও জানান ঝড়ের খবর পেলে তারা নিজেরাই বাঁধের মেরাবতির কাজে লেগে পড়েন।
সন্দেশখালি ১নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সুপ্রতীম আচার্য্য বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু বাঁধের কাজ চলছে। আমরা ইতিমধ্যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত গুলির সাথে বৈঠকে করেছি। এবং অত্যন্ত ভঙ্গুর বাঁধগুলি কোথায় রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সেচ দপ্তরকে জানানো হয়েছে। সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা খুব দ্রুত এই সমস্যার নিষ্পত্তি করবেন।”
বসিরহাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুশান্ত মাইতি বলেন, “আমরা গত একমাস আগে থেকেই সেচ দপ্তরকে সতর্ক করে রেখেছি। এবং সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ ও হাসনাবাদ সহ বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।”
কিন্তু সুন্দরবনের এই সমস্ত গ্রামগুলিতে ঢুকলে দেখা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ বাঁধেই সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে কাজ শুরু করা হয়নি। কিন্তু এই সুন্দরবন বাসিন্দাদের গ্যারান্টি কেউ নিক বা না নিক সুন্দরবনের নড়বড়ে এই বাঁধগুলির ওপর বসবাসকারী মানুষের নিদ্রাহীনতার ছবি ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে।