সারা বছর প্রতীক্ষায় বাঙালির বাঙালিয়ানা। পাঞ্জাবী-শাড়ি-ভুরিভোজ আর আড্ডায় কাটে গোটা দিন। তাছাড়া বাঙালির পরব মানেই আমিষ রকমারি রান্না। রইল হারিয়া যাওয়া মা ঠাকুমার হাতের রান্নার ৬টি রেসিপি।
গঙ্গা – যমুনা কই
যা যা লাগবে: কই মাছ – ৪ টে
গঙ্গার জন্য: সরষেবাটা – ২টেবলচামচ, কাঁচালঙ্কা – ৫টা, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো – ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়ো – ১ চা-চামচ, নুন – স্বাদমতো, পাঁচফোড়ন – ১ চা-চামচ, সরষের তেল – পরিমাণমতো
যমুনার জন্য: গোটা সরষে – ১চা-চামচ, তেঁতুলের ক্কাথ – ২ টেবলচামচ, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো – ১/২ চা-চামচ, চিনি – ২ চা-চামচ, নুন – স্বাদমতো, সরষের তেল – সামন্য
কীভাবে রান্না করবেন:
- কই মাছ ভালো করে ধুয়ে নুন ও হলুদ মাখিয়ে নিন।
- গরম তেলে কই মাছ দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন।
ওই তেলেই পাঁচফোড়ন দিন। - সুগন্ধ বের হলে সরষেবাটা, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো, নুন ও কাঁচালঙ্কা দিন।
- অল্প জল দিয়ে কম আঁচে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।
- গ্রেভি ঘন হলে মাছ দিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন।
- যমনা গ্রেভি তৈরির জন্য প্যানে ২ টেবিলচামচ সরষের তেল দিয়ে গোটা সরষে দিন।
- তেঁতুলের ক্কাথ মেশান।
- চিনি ও ১/৩ কাপ জল মেশান।
- ফুটে উঠলে মাছ (যে পিঠে সরষের গ্রেভি লাগেনি) দিন।
- মাখো-মাখো হলে নামিয়ে নিন।
- সার্ভিং ডিশে সাবধানে কই মাছ সাজিয়ে দিন।
- খেয়াল রাখবেন, সরষের গ্রেভিটা যাতে ওপরের দিকে থাকে।
ইলিশের দই-পোস্ত
যা যা লাগবে: ইলিশ মাছের টুকরো – ৪টি, টকদই – ১ কাপ, পোস্ত বাটা – সামান্য, পাতিলেবু – ১টি, কাজুবাদাম – ৬ টি, ক্রিম – ২ চামচ, লবণ ও চিনি পরিমাণ মতো, কাঁচালঙ্কার ফালি – ৬টি, সরষের তেল
কীভাবে রান্না করবেন
- প্রথমে ইলিশ মাছ ভালোভাবে ধুয়ে একটা আস্ত পাতিলেবুর রস, হলুদ আর লবণ দিয়ে ২ ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখুন।
- এবার পোস্ত, কাজুবাদাম একসঙ্গে বেটে নিন। এর সঙ্গে ক্রিম আর ১ চামচ দুধ মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। টকদইও ভালো করে লবণ ও চিনি দিয়ে ফেটিয়ে নিন।
- এবার ইলিশ মাছ ভালো করে ভেজে নিতে হবে। তারপর কড়াইতে কালোজিরা ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে পোস্ত বাটা ঢেলে দিন। একটু কষা হয়ে এলে দইয়ের মিশ্রণ দিন।
- খুব ভালোভাবে মিশে তেল ছেড়ে আসলে অল্প জল মিশিয়ে দিন। এরপর মশলার মিশ্রণে মাছ দিয়ে দিন। বেশ মাখা মাখা হয়ে এলে কাঁচালঙ্কার ফালি ছড়িয়ে দিন।
ছানার পাতুরি
যা যা লাগবে: ছানা: ১০০ গ্রাম, নুন: ৫-৬ গ্রাম, কাঁচালঙ্কা: স্বাদ অনুযায়ী, ময়দা: দেড় চামচ, চিনি: স্বাদ অনুযায়ী, পোস্ত: দেড় চামচ, সাদা সর্ষে: দেড় চামচ, কালো সর্ষে: দেড় চামচ, খানিকটা সরষের তেল, কলাপাতা: দুটো
কীভাবে রান্না করবেন:
- ছানা থেকে জল ঝরিয়ে সেগুলোকে হাতের তালুর সাহায্যে চ্যাপ্টা করে গড়ে নিন। এবার সাদা সর্ষে, কালো সর্ষে, পোস্ত, কাঁচালঙ্কা একসঙ্গে বেটে নিন।
- এতেই পাতুরির গায়ের মশলার প্রাথমিক ভাগটুকু তৈরি হয়ে গেল। এবার এর মধ্যে চিনি, নুন ও তেল ভাল করে মিশিয়ে নিন।
- ছানার টুকরোর গায়ে এই মিশ্রণ ভাল করে মাখিয়ে খানিক ক্ষণ রাখুন।
- এবার কলাপাতাগুলোকে মাঝারি আকারে কেটে ভাল করে ধুয়ে এর মাঝে পুর মাখানো ছানার টুকরোগুলো রাখুন।
- ভাল করে চারপাশ মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিন।
- এই অবস্থায় স্টিমিং করার পাত্রে বসিয়ে পাতুরিকে স্টিম করতে পারেন।
- বাড়িতে ভাপানোর তেমন আয়োজন না থাকলে একটি ধার উঁচু পাত্রে জল ভরে আঁচ বাড়িয়ে তাকে ফুটতে দিন। সেই ফুটন্ত জলে কলাপাতায় মোড়ানো পাতুরি ভরা টিফিন কৌটো ভাসিয়ে দিন।
- জল ফোটার সঙ্গে ভিতরের পাতুরিও সুন্দর ভাপিয়ে নেওয়া যাবে এই সহজ পদ্ধতিতে।
- মিনিট পাঁচেক ভাপানোর পর টিফিন কৌটো খুলে দেখুন পুর ভাল করে মজেছে কি না।
- প্রয়োজনে আরো খানিক ক্ষণ ভাপিয়ে নামিয়ে নিন।
- পরিবেশের আগে চেরা কাঁচালঙ্কা ও সর্ষের তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
মোহিনী চিংড়ি
যা যা লাগবে:
চিংড়ি ২৫০ বড় মাপের, একটা বড় পেঁয়াজবাটা, নারকেল বাটা ২ চা চামচ, কাজুবাটা ১ চা চামচ, বড় সাইজের ১ টমেটো বাটা, ২ টি কাঁচালঙ্কা বাটা, লঙ্কাগুঁড়াে আধা চা চামচ, ১ চা চামচ দুধ, সামাণ্য এলাচগুঁড়াে তেল ও হলুদ প্রয়ােজনমতাে, নুন ও চিনি স্বাদনুযায়ী।
কীভাবে রান্না করবেন
- প্রথমে নুন হলুদ মাখিয়ে হালকা করে চিংড়ি ভেজে তুলে রাখুন।এবার কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজবাটা দিন।
- পেঁয়াজে হালকা রঙ ধরলে একে একে নারকেল বাটা, কাজুবাটা, টমেটো বাটা,কাঁচালঙ্কা বাটা, লঙ্কাগুঁড়াে, নুন ও চিনি নিয়ে অল্প কষে চিংড়ি মাছ গুলি দিয়ে দিন।
- কড়াই থেকে তেল ছেড়ে দিলে দুধ ও এলাচগুঁড়াে দিয়ে সামাণ্য নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন।
সুস্বাদু ছানার কচুরি
যা যা লাগবে:
ময়দা ৫০০ গ্রাম, প্রয়ো
জন মতো সাদা তেল, সামান্য লবণ, ১ লিটার দুধ, সামান্য চিনি, ভিনিগার বা লেবুর রস, সামান্য গরম মশলা গুঁড়ো, আদার রস ৪-৫ টেবল চামচ
কীভাবে রান্না করবেন:
- দুধ ভালো করে ফোটান।
- ভিনিগার বা লেবুর রস গরম দুধে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। ছানা কেটে গেলে নামিয়ে রাখুন।
ছানার জল ঝরিয়ে নিন। - জল ঝরানো ছানায় সামান্য লবণ, গরম মশলা, আদার রস মিশিয়ে মেখে নিন।
- ময়দায় সামান্য লবণ, চিনি, তেল দিয়ে ভালো করে মেখে লেচি বানান।
- লেচিতে ছানার পুর ভরে কচুরির আকারে বেলুন।
- কড়াইতে তেল গরম করে ভেজে নিলেই তৈরি ছানার কচুরি।
- এই পদটি নিরামিষ এবং আমিষ উভয় তরকারির সঙ্গেই ভালো লাগবে।
খাসা খাসি
যা যা লাগবে: খাসির মাংস – ৫০০ গ্রাম, আদা-রসুনবাটা – ২ চা চামচ, ঘি – ৩ চা চামচ, কাজুবাদাম (গরম জলে ভিজিয়ে রাখা) – ৫০ গ্রাম, তেজপাতা – ২-৩ টে,টকদই – ১ কাপ, সাদা তিল (গরম জলে ভিজিয়ে রাখা) – ১৫ গ্রাম, পাতিলেবু – ১ টি (রস বের করে নেওয়া), পিঁয়াজ – ৩ টে, ধনে-জিরেগুঁড়ো – ১ টেবল চামচ, দুধ – ৪ টেবল চামচ, পরিমাণমতো জল, স্বাদমতো নুন, চিনি – ১ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা – ৪-৫ টি, ছোট এলাচ – ৩ টি, লবঙ্গ – ২ টি, দারচিনি – ১ ইঞ্চি, নারকেল দুধ – ১ কাপ, গরম মশলাগুঁড়ো – ১ চা চামচ
কীভাবে রান্না করবে:
- মাংস মাঝারি টুকরোয় কেটে, ধুয়ে, টকদই মাখিয়ে ২ ঘন্টা রেখে দিন
- ভিজিয়ে রাখা কাজুবাদাম ও সাদা তিল বেটে নিন
- পিঁয়াজ সেদ্ধ করে বেটে নিন
- কড়াইয়ে ঘি গরম করে তেজপাতা, গোটা গরমমশলা (ছোট এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি) দিয়ে, অল্প নাড়াচাড়া করে, সেদ্ধ পিঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা মিশিয়ে কষান
- ম্যারিনেট করে রাখা মাংস দিয়ে মশলার সঙ্গে কষতে থাকুন
- স্বাদমতো নুন, চিনি, জিরে ও ধনেগুঁড়ো মেশান
- এরপর পরিমাণমতো ,জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ হতে দিন
- মাংস পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে গেলে, নারকেলের দুধ মিশিয়ে ফোটান
- ঝোল গাঢ় হয়ে এলে, ঘি, গরমমশলাগুঁড়ো আর কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
- গরম গরম পরিবেশন করুন পোলাও অথবা ভাতের সঙ্গে