ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara) সম্প্রতি সমস্ত ধরনের ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন, যা তাঁর ১৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সমাপ্তি চিহ্নিত করেছে। একটি সাধারণ রবিবার সকালে পূজারার এই নীরব অবসর ঘোষণা ক্রিকেট বিশ্বে একটি ধাক্কার সৃষ্টি করেছে। তিনি বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার পাশাপাশি এই বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া তৃতীয় বড় ব্যাটসম্যান হলেন। টেস্ট ক্রিকেট ছিল পূজারার আসল ক্ষেত্র, যেখানে তাঁর ঐতিহ্যবাহী ব্যাটিং শৈলী তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। ভারতের পেস স্পিয়ারহেড জসপ্রীত বুমরাহ ইনস্টাগ্রামে পূজারাকে শুভকামনা জানিয়ে লিখেছেন, “ক্রিকেট তোমাকে মিস করবে পূজ্জি ভাই। তোমার পরবর্তী অধ্যায়ে সাফল্য কামনা করছি।”
অপরদিকে, স্টাইলিশ ওপেনার কেএল রাহুল ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের দক্ষতার সারাংশ তুলে ধরে ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং ক্লাসের এক যুগ। শুভ অবসর পূজ্জি। তোমার পরবর্তী অধ্যায়ে শুভকামনা।”
গত দুই বছরে ভারতীয় দল পূজারাকে ক্রমশ বাদ দিয়েছে। টেস্ট দলে তাঁর ক্রমাগত অনুপস্থিতি এটির সুস্পষ্ট প্রমাণ, যদিও তিনি সৌরাষ্ট্র এবং কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সাসেক্সের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সক্রিয় ছিলেন। পূজারা ২০১০ সালের অক্টোবরে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেন এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের উত্থানের যুগেও টেস্ট ফরম্যাটে অবিচল থেকে তাঁর অসাধারণ প্রতিরক্ষা এবং মানসিক দৃঢ়তার জন্য পরিচিতি অর্জন করেন।
৩৭ বছর বয়সে পূজারা তাঁর ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। তিনি ১০৩ টেস্টে ৭,১৯৫ রান করেছেন, গড় ৪৩.৬০, যার মধ্যে ১৯টি সেঞ্চুরি এবং ৩৫টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। তাঁর ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি সাফল্যের গল্প রয়েছে, যার মধ্যে ২০১৮-১৯ বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফি অন্যতম। এই সিরিজে পূজারা ১,২৫৮ বল খেলে ৫২১ রান করেছিলেন, গড় ৭৪.৪২, এবং সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
পূজারা তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “এই পরিকল্পনা গত এক সপ্তাহ ধরে চলছিল। আমি গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় দলে ছিলাম না, তবে এখন আমি ভেবেছি এটাই সঠিক সময়, কারণ তরুণ খেলোয়াড়রা ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছে, তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবার এবং বড় খেলোয়াড়দের সাথে আলোচনা করা হয়, তাই আমি সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।”
পূজারার অবসর ভারতীয় ক্রিকেটে একটি যুগের অবসান ঘটিয়েছে। তাঁর অবিচল প্রতিরক্ষা এবং ধৈর্যশীল ব্যাটিং টেস্ট ক্রিকেটের সোনালি দিনগুলির প্রতীক ছিল। তিনি ভারতের টেস্ট ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থাকবেন, বিশেষ করে তাঁর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য। পূজারার অবদান শুধু রানের পরিসংখ্যানে নয়, বরং তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে। তাঁর টেস্ট ক্রিকেটে অধ্যবসায় এবং শৃঙ্খলা ভারতীয় ক্রিকেটে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বুমরাহ এবং রাহুলের মতো সতীর্থদের শ্রদ্ধা প্রমাণ করে যে পূজারা কেবল একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি একটি আদর্শ যিনি দলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর অবসরের পর, ভারতীয় ক্রিকেট এখন তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে, যারা পূজারার মতো কিংবদন্তির পথ ধরে এগিয়ে যাবে। তাঁর পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই, তবে ক্রিকেট প্রেমীদের মনে তিনি চিরকাল অমর থাকবেন।