বিশেষ পরিকল্পনায় জলমুক্ত হবে পানিহাটি শহর, দাবি পুরসভার

বর্ষা মানেই পানিহাটির (Panihati Corporation)  বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুজল। রোজকার জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে কার্যত ক্লান্ত বাসিন্দারা। সকাল থেকে অফিসযাত্রীদের ভিজে পোশাকেই ট্রেনে উঠতে হয়েছে,…

Panihati city will be free from water with a special plan, claims the municipality

বর্ষা মানেই পানিহাটির (Panihati Corporation)  বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুজল। রোজকার জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে কার্যত ক্লান্ত বাসিন্দারা। সকাল থেকে অফিসযাত্রীদের ভিজে পোশাকেই ট্রেনে উঠতে হয়েছে, স্কুলের পড়ুয়াদের বই খাতায় জল লেগেছে, দোকানদারদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা এই সমস্যাই যেন পানিহাটির এক অলিখিত পরিচয় হয়ে উঠেছিল। তবে চলতি বছর থেকে সেই পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে বলে আশ্বাস দিলেন পানিহাটি পুরসভার পুরপ্রধান সোমনাথ দে।

পুরপ্রধানের(Panihati Corporation)  দাবি, “৫০-৬০ বছর ধরে জমা জলের সমস্যা যেভাবে এই অঞ্চলের মানুষজনকে বিপদে ফেলেছে, এবার তার অবসান ঘটানো হবে। পুরসভা একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।” এই ঘোষণার পরই আশার আলো দেখছেন সাধারণ মানুষ।

   

সমস্যার ইতিহাস

পানিহাটির (Panihati Corporation)  ভৌগোলিক অবস্থান জল জমার অন্যতম প্রধান কারণ। গঙ্গার ধারে হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল নামতে সময় নেয়। আবার, ড্রেনেজ সিস্টেমের বেহাল দশা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে। বর্ষার দিনে অল্প সময়ের ভারী বৃষ্টি হলেই বেশ কয়েকটি এলাকা কার্যত প্লাবিত হতো। বিশেষত দমদম রোড, বি টি রোড লাগোয়া অঞ্চল, এবং পুরসভার ১২, ১৫, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাঁটুজল নিত্য ঘটনা।

এছাড়া পুরনো ড্রেনগুলির অধিকাংশই সংকীর্ণ। কোথাও মাটি জমে আটকে গেছে, কোথাও বা অবৈধ দখলে ড্রেন কার্যত অচল। ফলে পানিহাটির মানুষজনের কাছে জল জমা এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই মনে হতো।

বিশেষ পরিকল্পনা

এই পরিস্থিতি বদলাতে পুরসভা বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা নিয়েছে। আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলার পাশাপাশি, পুরনো ড্রেনগুলিকে সংস্কার ও প্রশস্ত করা হবে। গঙ্গার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখে পাম্পিং স্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

পুরপ্রধান সোমনাথ দে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। বড় আকারের নর্দমা লাইন তৈরি করা হবে, যাতে দ্রুত জল বেরিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যেসব এলাকায় জমি খালাস করে নতুন ড্রেন তৈরি সম্ভব নয়, সেখানে আধুনিক আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপলাইন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রিয়েল টাইম মনিটরিং সিস্টেম বসানো হবে। এর মাধ্যমে কোথাও জল জমতে শুরু করলেই দ্রুত পুরসভার কর্মীরা ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

Advertisements

তহবিল ও সময়সীমা

প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এই টাকা জোগাড় করা হবে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছে পুরসভা। সোমনাথ দে’র কথায়, “এটা আমাদের অঙ্গীকার। পানিহাটির মানুষ আর জলজটে ভুগবেন না।”

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

পানিহাটির (Panihati Corporation)  বাসিন্দাদের মধ্যে অবশ্য এখনও কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে আশ্বাস শুনতে শুনতে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তবে এবারের পরিকল্পনা নিয়ে তাঁদের মধ্যে খানিকটা আশাবাদও তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব মজুমদার বলেন, “প্রতি বছর জল জমে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যদি সত্যিই পুরসভা পরিকল্পনা মতো কাজ করে, তবে আমরা অনেকটাই স্বস্তি পাব।”

অন্যদিকে, কয়েকজন নাগরিক মনে করছেন— কেবল ড্রেন সংস্কার করলেই চলবে না, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত নজরদারিও জরুরি।

সামনে কী?

পানিহাটির জলজট (Panihati Corporation)  সমস্যার স্থায়ী সমাধান যদি সত্যিই হয়, তবে এটি হবে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। একদিকে যেমন নাগরিকদের দৈনন্দিন ভোগান্তি দূর হবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অতএব, এই বিশেষ পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলবে। তবে পুরসভার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পানিহাটির মানুষের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে।