কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যখন অধীর আগ্রহে ৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন, তখনও এর বিলম্বিত সূচনা ইঙ্গিত করছে যে কর্মীরা অন্তত আরও একটি মহঙ্গভাতা (Dearness Allowance – DA) বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন বর্তমান ৭ম বেতন কমিশনের (7th Pay Commission) আওতায়।
ডিএ হাইক কবে ঘোষণা হবে?
মহঙ্গভাতা বা ডিএ বছরে দুইবার ঘোষণা করা হয়— জানুয়ারি ও জুলাই মাস থেকে কার্যকর করে। তবে সরকার সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে থাকে।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে জুলাই মাসের ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা অক্টোবর মাসে হয়েছে।
২০২২ সালে এটি ঘোষণা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে।
তাই এবারও জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়কালের ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা সেপ্টেম্বরে শেষের দিকে অথবা দীপাবলির আগে অক্টোবরে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটি কেবল প্রত্যাশা— চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া হবে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ডিএ ৫৫%। মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI-IW) পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, এবার ডিএ বাড়বে প্রায় ৩ শতাংশ, অর্থাৎ জুলাই থেকে তা দাঁড়াবে ৫৮%-এ।
এটি হবে ৭ম বেতন কমিশনের আওতায় শেষ ডিএ সংশোধন, কারণ এর কার্যকাল শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এ।
ডিএ হাইক কীভাবে হিসাব করা হয়?
ডিএ বৃদ্ধির হিসাব করা হয় শ্রম ব্যুরো (Labour Bureau) প্রকাশিত ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI-IW)-এর ভিত্তিতে। গত ১২ মাসের গড় সূচক নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলা ব্যবহার করে হিসাব হয়—
DA (%) = [(১২ মাসের গড় CPI-IW – 261.42) ÷ 261.42] × 100
এখানে 261.42 হল ২০১৬ সালের বেস ইয়ারে নির্ধারিত সূচক, যা ৭ম বেতন কমিশনের মানদণ্ড।
একজন এন্ট্রি-লেভেল কর্মচারীর মূল বেতন যদি হয় ১৮,০০০ টাকা, তবে বর্তমানে তিনি ডিএ হিসেবে পাচ্ছেন প্রায় ৯,৯৯০ টাকা। ৩% বৃদ্ধির পর সেই পরিমাণ দাঁড়াবে ১০,৪৪০ টাকা। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৫৪০ টাকা বেশি পাবেন।
যাদের বেসিক বেতন বেশি, তাদের ক্ষেত্রে বর্ধিত ভাতার পরিমাণও বেশি হবে। ফলে জুলাই ২০২৫ থেকে সব কর্মচারীই পিছনের মাসগুলোর বকেয়াসহ (arrears) ডিএ পাবেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৮ম বেতন কমিশনের ঘোষণা করা হলেও, এখনও সরকার Terms of Reference (ToR) নির্ধারণ করেনি বা কমিশনের সদস্য নিয়োগ করেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ কারণে কমিশনের রিপোর্ট তৈরি ও বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
পূর্ববর্তী ৬ষ্ঠ ও ৭ম বেতন কমিশনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কমিশন গঠনের পর রিপোর্ট প্রস্তুত করতে লেগেছে গড়ে ১.৫ বছর, আর রিপোর্ট অনুমোদনের পর বাস্তবায়নে লেগেছে আরও ৩-৯ মাস। সেই হিসেবে ৮ম কমিশন কার্যকর হতে পারে ২০২৬ সালের শেষভাগে বা ২০২৭ সালের শুরুতে।
ব্রোকারেজ ফার্ম Kotak Institutional Equities-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
নতুন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (fitment factor) হতে পারে ১.৮।
সর্বনিম্ন বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০,০০০ টাকা করার সুপারিশ আসতে পারে।
এর ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেসিক বেতনের কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আসবে।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর আসলে একটি গুণিতক, যার মাধ্যমে পুরনো বেতন কাঠামোকে নতুন স্তরে উন্নীত করা হয়।
৮ম বেতন কমিশন বাস্তবায়িত হলে সরকারের অতিরিক্ত আর্থিক চাপ হবে জিডিপির প্রায় ০.৬-০.৮%। হিসেব অনুযায়ী, এটি দাঁড়াবে ২.৪-৩.২ লাখ কোটি টাকা।
প্রায় ৩৩ লাখ কেন্দ্রীয় কর্মচারী সরাসরি উপকৃত হবেন, এর মধ্যে প্রায় ৯০% গ্রেড সি কর্মচারী সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন।
সবমিলিয়ে, জুলাই ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা ৩% ডিএ বৃদ্ধির সুবিধা পেতে যাচ্ছেন, যা হবে ৭ম বেতন কমিশনের শেষ ডিএ হাইক। আর ৮ম বেতন কমিশনের সুবিধা পেতে হলে কর্মচারীদের অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত এক থেকে দেড় বছর। তবে একবার কার্যকর হলে এটি কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের আয় কাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তন আনবে।