২০২৫ সালে সংসদ কর্তৃক পাশ হওয়া Online Gaming Bill 2025–এর ফলে রিয়েল-মানি গেম যেমন রামি, পোকার বা অন্য অনলাইন ক্যাশ গেম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে চলেছে। তবে যারা এই আর্থিক বছরে (FY25) অর্থাৎ ১ এপ্রিল ২০২৪ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৫–এর মধ্যে এমন গেম খেলেছেন এবং অর্থ জিতেছেন, তাঁদের জন্য ট্যাক্স ফাইলিং (ITR AY2025-26) বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ, আয়কর দপ্তর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—অনলাইন গেমিং থেকে আসা প্রতিটি টাকাই আয় হিসাবে গণ্য হবে এবং তার ওপর আলাদা নিয়মে কর ধার্য করা হবে।
অনলাইন গেম থেকে আয় অন্য সাধারণ আয়ের মতো নয়। এর ওপর সরাসরি প্রযোজ্য আয়কর আইনের ধারা 115BBJ। এই ধারায় বলা হয়েছে, প্রথম টাকা থেকে শেষ টাকা পর্যন্ত—সমস্ত আয়ের ওপর ফ্ল্যাট ৩০% হারে কর দিতে হবে। এখানে কোনও বেসিক এক্সেমশন লিমিট (₹২.৫ লক্ষ পর্যন্ত করমুক্ত আয়) বা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন প্রযোজ্য নয়।
অর্থাৎ আপনি যদি মাত্র ১০ টাকা জিতেও থাকেন, তার ওপর কর দিতে হবে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত সারচার্জ এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা সেসও যোগ হবে। ফলে অনলাইন গেমিং আয় বর্তমানে আয়ের অন্যতম সর্বাধিক করযুক্ত শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে লাভ–ক্ষতি হিসাব করা যায় এবং এক বছরের ক্ষতি পরবর্তী বছরগুলিতে ক্যারি ফরওয়ার্ড করে দেখানো যায়। কিন্তু অনলাইন গেমিং আয়ের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই।
এখানে শুধু “পজিটিভ নেট উইনিংস” বা মোট জেতা অর্থকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কোনও ক্ষতি অন্য আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না, আবার তা ভবিষ্যতের জন্য বহনও করা যাবে না। আয়কর রিটার্ন ফাইলিং সিস্টেমও এইভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে গেমিং ইনকামের ঘরে নেগেটিভ ফিগার বসানো না যায়।
অতএব, একদিন ১০,০০০ টাকা হারালেও অন্যদিনের ২,০০০ টাকা জিতের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতি বাদ যাবে না। পুরো ২,০০০ টাকার ওপরই কর ধার্য হবে।
গেমিং কোম্পানিগুলির ওপরই ট্যাক্স কাটার দায়িত্ব বর্তায়। আয়কর আইনের ধারা 194BA অনুযায়ী, Rule 133–এর মাধ্যমে “নেট উইনিংস” এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখানে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলিত অর্থ এবং ক্লোজিং ব্যালান্সের যোগফল থেকে ওপেনিং ব্যালান্স ও অ-করযোগ্য ডিপোজিট বাদ দিয়ে যে পরিমাণ থাকে, সেটিই ধরা হয় “নেট উইনিংস”। সেই টাকার ওপর সরাসরি টিডিএস (Tax Deducted at Source) কেটে নেবে প্ল্যাটফর্ম, তারপর অবশিষ্ট টাকা খেলোয়াড় তুলতে পারবেন।
অনলাইন গেমিং থেকে আয় গোপন করলে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আয়কর দপ্তর বিভিন্ন সেকশন অনুযায়ী (যেমন 139(1), 142(1), 148) নোটিস পাঠাতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত গোপনীয়তা প্রমাণিত হলে ফৌজদারি মামলাও শুরু হতে পারে। যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রসিকিউশন স্বয়ংক্রিয় নয়—প্রমাণের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে আয় কম হলেও আইন স্পষ্ট: প্রতিটি জেতার অঙ্কই রিটার্নে দেখাতে হবে।
আয়কর নিয়মের Rule 12BA অনুযায়ী, যদি কোনও করদাতার এক আর্থিক বছরে মোট টিডিএস বা টিসিএসের পরিমাণ ২৫,০০০ টাকার বেশি হয়, তবে তাঁকে ITR ফাইল করা বাধ্যতামূলক—even যদি তাঁর মোট আয় করমুক্ত সীমার নিচে থাকে।
অতএব, কেউ যদি অন্য কোনও আয় না–ও করে থাকেন, কিন্তু অনলাইন গেমে জেতার কারণে তাঁর টিডিএস কাটা হয়েছে ২৫,০০০ টাকার বেশি, তবে রিটার্ন ফাইল করতেই হবে।
সরকারি যুক্তি অনুযায়ী, অনলাইন গেমিং খাতে বিপুল পরিমাণে কালো টাকা ও অঘোষিত আয় ঘুরছে। অনেক খেলোয়াড় ট্যাক্স না দিয়ে অর্থ তুলতেন। ফলে এখন প্রতিটি টাকার ওপর টিডিএস কেটে নেওয়ায় সরকারের আয় বাড়বে এবং ট্যাক্স–কমপ্লায়েন্সও শক্তিশালী হবে।
একইসঙ্গে নতুন বিল গেমিং আসক্তি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার কথাও বলছে। তবে অনলাইন রিয়েল–মানি গেম পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত FY25–এর আয় রিপোর্ট করা করদাতাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
১. আপনার গেমিং অ্যাকাউন্টে যত আয় হয়েছে, তার সমস্ত রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।
২. প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত টিডিএস সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে রাখুন।
৩. ITR ফাইল করার সময় “Income from Other Sources” শিরোনামের নিচে আয় দেখান।
৪. আয় কম হলেও রিপোর্ট করুন—ভবিষ্যতে কোনও নোটিস এড়াতে এটি জরুরি।
৫. প্রয়োজনে কর পরামর্শদাতার সাহায্য নিন।
অনলাইন গেমিং আয়ের ক্ষেত্রে করনীতি অত্যন্ত কঠোর ও স্বচ্ছ। ক্ষতির ছাড় নেই, প্রতিটি টাকাই করযোগ্য, এবং প্ল্যাটফর্ম থেকেই টিডিএস কেটে নেওয়া হবে। এমনকি ১০ টাকা জেতাও ট্যাক্সের আওতায় আসছে। ফলে FY25–এ যারা গেম খেলেছেন, তাঁদের উচিত সময়মতো সঠিকভাবে ITR ফাইল করে করদায়িত্ব পূর্ণ করা। এতে আইন মেনে চলা যেমন হবে, তেমনি ভবিষ্যতের আইনি জটিলতা থেকেও মুক্তি মিলবে।