ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) তাদের গগনযান মিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। ইসরো আজ, ২৪ আগস্ট গগনযান মিশনের প্যারাশুট-ভিত্তিক ডিসেলারেশন সিস্টেমের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার প্রদর্শনের জন্য প্রথম ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ড্রপ টেস্ট (আইএডিটি-০১) সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
এই পরীক্ষা ইসরো, ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ), প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও), ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় কোস্ট গার্ডের যৌথ প্রচেষ্টার ফলাফল। এই পরীক্ষাটি ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন গগনযানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
গগনযান মিশনের লক্ষ্য হল তিনজন মহাকাশচারীকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে (এলইও) তিন দিনের মিশনে পাঠানো এবং তাঁদের নিরাপদে ভারতীয় জলসীমায় অবতরণ করানো। এই মিশনের সাফল্যের জন্য প্যারাশুট-ভিত্তিক ডিসেলারেশন সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ক্রু মডিউলের গতি কমিয়ে নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করে।
আইএডিটি-০১ পরীক্ষাটি এই সিস্টেমের কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এই পরীক্ষায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর চিনুক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে প্রায় ৪,০০০-৪,৫০০ কেজি ওজনের একটি ডামি ক্রু মডিউলকে ৪ কিলোমিটার উচ্চতায় তুলে বঙ্গোপসাগরে ফেলা হয়। এরপর, প্যারাশুট সিস্টেমের ক্রমিক মোতায়েনের মাধ্যমে মডিউলটি নিরাপদে সমুদ্রে অবতরণ করে।
ইসরোর তথ্য অনুযায়ী, গগনযানের ডিসেলারেশন সিস্টেমে মোট দশটি প্যারাশুট রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি প্রধান প্যারাশুট, অ্যাপেক্স কভার সেপারেশন প্যারাশুট, পাইলট প্যারাশুট এবং ড্রগ প্যারাশুট রয়েছে। এই পরীক্ষায় একটি প্রধান প্যারাশুট ব্যর্থ হওয়ার পরিস্থিতি অনুকরণ করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে দুটি প্রধান প্যারাশুটই মহাকাশচারীদের নিরাপদ অবতরণের জন্য যথেষ্ট।
এই সিস্টেমের নকশা এবং উন্নয়ন ইসরো এবং ডিআরডিওর যৌথ উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে। তিরুবনন্তপুরমের বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার (ভিএসএসসি) এই পরীক্ষার জন্য সামগ্রিক সিস্টেম ডিজাইন, প্যারাশুট মোতায়েনের সিমুলেশন, এবং যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক ইন্টিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করেছে।
এই পরীক্ষাটি ইসরোর শ্রীহরিকোটা স্থিত সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে (এসডিএসসি-শার) সকালে সূর্যোদয়ের সময় পরিচালিত হয়েছিল। পরীক্ষাটি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল, এবং এই মাসে বেশ কয়েকবার পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছিল কারণ উত্তর আন্ধ্রপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলে ঝড়ের কারণে আবহাওয়া প্রতিকূল ছিল।
তবে, আজ সকালে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ইসরো, ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড এই অপারেশনের সময় বায়ু ও সমুদ্র থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছে।
ইসরোর একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে বলা হয়েছে, “ইসরো গগনযান মিশনের জন্য প্যারাশুট-ভিত্তিক ডিসেলারেশন সিস্টেমের প্রথম ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ড্রপ টেস্ট (আইএডিটি-০১) সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষা ইসরো, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ডিআরডিও, ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় কোস্ট গার্ডের যৌথ প্রচেষ্টার ফলাফল।” এই পরীক্ষা গগনযান প্রকল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন পরিচালনার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
এই পরীক্ষা গগনযানের জন্য হাজার হাজার পরীক্ষার মধ্যে একটি, যা বৈদ্যুতিক, যান্ত্রিক, রাসায়নিক, সফটওয়্যার, নেভিগেশন এবং গাইডেন্সের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালিত হচ্ছে। গগনযান মিশনের আগে দুটি মানববিহীন মিশন (জি১ এবং জি২) পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সিস্টেমের নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করবে। এই পরীক্ষাগুলি ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসরোর চেয়ারম্যান ড. ভি. নারায়ণন এই সাফল্যের জন্য সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এই পরীক্ষা আমাদের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা এবং দেশের শীর্ষ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের প্রমাণ।”
BSF-এর অভিযানে ১৫ জন পাকিস্তানি জেলে গ্রেফতার, বাজেয়াপ্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকা
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড সমুদ্রে ক্রু মডিউল পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা মিশনের চূড়ান্ত ধাপ। এই সাফল্য ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে মানব মহাকাশ মিশন পরিচালনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।