ওয়াংখেড়েতে অভিনব উদ্যোগে ‘লিট্ল মাস্টার’কে শ্রদ্ধা জানাল মুম্বই

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাস্করের (Little Master) প্রতি সম্মান জানাতে মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) গতকাল, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, মুম্বইয়ের আইকনিক ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে…

Little Master new statue

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাস্করের (Little Master) প্রতি সম্মান জানাতে মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) গতকাল, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, মুম্বইয়ের আইকনিক ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর জীবন্ত মূর্তি উন্মোচন করেছে। এই মূর্তি উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এমসিএ শরদ পাওয়ার ক্রিকেট মিউজিয়ামেরও উদ্বোধন করা হয়েছে।

এই মূর্তি মুম্বইয়ের সমৃদ্ধ ক্রিকেট ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি প্রচেষ্টা। মূর্তি উন্মোচনের সময় সুনীল গাভাস্কর নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি এই সম্মানে অভিভূত হয়ে বলেন, “আমি সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কারণ এই অনন্য সম্মানে আমি অভিভূত। এমন সম্মান সবার জীবনে আসে না।”

   

এই মূর্তিটি গাভাস্করের ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদ টেস্টে টেস্ট ক্রিকেটে ১০,০০০ রানের মাইলফলক অর্জনের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখে। তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। গাভাস্কর বলেন, “এই মূর্তি আমাকে সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন আমি আমার ১০,০০০তম রান করেছিলাম।

এটি আমার জন্য খুবই স্মরণীয় মুহূর্ত।” এই মূর্তি মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শকের সমাগম হবে। এই মূর্তি শুধুমাত্র গাভাস্করের ক্রিকেটীয় কৃতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্যও একটি প্রেরণার প্রতীক।

মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অজিঙ্ক্য নায়েক জানিয়েছেন, “গাভাস্করের মূর্তি শ্রেষ্ঠত্ব এবং নিষ্ঠার প্রতীক। এটি তরুণ ক্রিকেটারদের বড় স্বপ্ন দেখতে এবং উচ্চ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রেরণা দেবে।” মিউজিয়ামটি ৮,০০০ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে মুম্বইয়ের ক্রিকেট ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বাপু নাডকার্নির ব্লেজার থেকে শুরু করে রোহিত শর্মার ২০২৩ বিশ্বকাপের ব্যাট এবং জার্সি পর্যন্ত বিভিন্ন স্মারক সামগ্রী প্রদর্শিত হবে। গাভাস্কর নিজে তাঁর দাদর ইউনিয়ন স্পোর্টস ক্লাবের ক্যাপ এবং মুম্বইয়ের ক্যাপ মিউজিয়ামে দান করেছেন।

তিনি বলেন, “দাদর ইউনিয়ন আমাকে শিখিয়েছে যে খেলা ব্যক্তির চেয়ে বড়। এই ক্যাপটি আমি ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেলবোর্ন টেস্টে পরেছিলাম, যেখানে ভারত জয়ী হয়েছিল।”

গাভাস্কর, যিনি ১২৫ টেস্টে ১০,১২২ রান করেছেন এবং ৩৪টি শতরানের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ড গড়েছিলেন, তিনি মুম্বই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আমার মায়ের মতো।

Advertisements

এটি আমার হাত ধরে আমাকে ক্রিকেটের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।” তিনি তাঁর স্কুল, ক্লাব, রঞ্জি ট্রফি এবং টেস্ট ক্রিকেটে সতীর্থদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যাদের সমর্থন ছাড়া তিনি এই সাফল্য অর্জন করতে পারতেন না।

শরদ পাওয়ার ক্রিকেট মিউজিয়ামটি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হবে। এটি মুম্বইয়ের ক্রিকেট ইতিহাসের পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবময় মুহূর্তগুলো তুলে ধরবে। মিউজিয়ামে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনী, ঐতিহাসিক স্মারক এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা কেন্দ্র থাকবে, যা দর্শকদের ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি অভিনব উপায় প্রদান করবে।

এমসিএ সেক্রেটারি অভয় হাডাপ জানিয়েছেন, “২৮ জন ক্রিকেটারের স্মারক সামগ্রী ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা সচিন তেন্ডুলকরের কাছ থেকেও কিছু পাওয়ার আশা করছি।”

গাভাস্করের মূর্তি উন্মোচনের এই ঘটনা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা এই মুহূর্তকে “ক্রিকেট ইতিহাসের একটি মাইলফলক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়, “ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সুনীল গাভাস্করের মূর্তি উন্মোচন একটি নস্টালজিক মুহূর্ত।

রেল কর্তৃপক্ষের বড় ঘোষণা, ব্লু লাইনে বাড়ছে মেট্রো সংখ্যা

এটি তাঁর ১০,০০০ রানের কৃতিত্বকে অমর করে রাখবে।”এই মূর্তি উন্মোচন এবং মিউজিয়ামের উদ্বোধন মুম্বই ক্রিকেটের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং ভারতীয় ক্রিকেটে গাভাস্করের অবদানকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এটি ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদ্যোগ।