শহরে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হতেই ফের সামনে আসছে পুরনো সমস্যা—চাঁদা তোলার অভিযোগ। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জনবহুল রাস্তা কিংবা গলিতে পুজো প্যান্ডেল তৈরির নামে গাড়ি আটকে কিংবা ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে চাঁদা আদায়ের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। পাইকপাড়া, চিড়িয়ামোড়, কসবা, শিয়ালদহ ও বড়বাজার—এই সব ব্যস্ততম অঞ্চলে অভিযোগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে লালবাজার (Lalbajar Police) । এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে বা ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে খবর।
অভিযোগে সক্রিয় লালবাজার
কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই সমস্ত থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিটি থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাকায় পুজো মণ্ডপ তৈরির নামে বা রাস্তা দখল করে যদি কেউ চাঁদা তোলে, তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ করতেও পিছপা হওয়া যাবে না। এক কর্তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, শহরের স্বাভাবিক জনজীবন ও যান চলাচল ব্যাহত করে কোনওভাবে চাঁদা তোলা বরদাস্ত করা হবে না।
অনুমতির প্রয়োজনীয়তা
লালবাজার(Lalbajar Police) জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর মণ্ডপ নির্মাণের জন্য যদি রাস্তা ব্যবহার করতে হয়, তবে তার জন্য অবশ্যই কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের কাছ থেকে পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কেউ রাস্তা দখল করে কোনও কাঠামো গড়লে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—পুজোর আবেগকে পুঁজি করে কেউ আইন ভাঙতে পারবে না।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের অন্যতম কর্তা শ্বাশ্বত বসু এ বিষয়ে বলেন, “দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে কোনও রকমের জবরদস্তি বা চাঁদা তোলা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে এবং পুজোর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে। তাই প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।”
উৎসবের আবহ বজায় রাখার প্রচেষ্টা
প্রতি বছরই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ সামনে আসে। কোথাও ট্র্যাফিক (Lalbajar Police) সমস্যার জন্য সাধারণ মানুষের অসুবিধা, কোথাও আবার চাঁদা তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ। তবে এ বছর থেকেই প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। একদিকে পুজো মণ্ডপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে, অন্যদিকে কোনও বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা
শহরের বাসিন্দাদের মতে, দুর্গাপুজো মানেই আনন্দ, আলো আর উৎসবের আবহ। এই উৎসবকে ঘিরে যদি জোর করে চাঁদা তোলার মতো ঘটনা ঘটে, তবে তা উৎসবের আনন্দ নষ্ট করে দেয়। তাই পুলিশের এই পদক্ষেপে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, প্রশাসন যদি সত্যিই কড়া হাতে নজরদারি চালায়, তবে অন্তত এবারের মতো তারা কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।