SIR নথিতে আধারও যুক্ত হতে পারে, মত শীর্ষ আদালতের

বিহারে আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং বিশেষত Summary of Information Report (SIR)-এর ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য করা যায় কি না, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত…

Supreme Court Summons 9 States Over Harassment of Bengali Migrant Workers

বিহারে আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং বিশেষত Summary of Information Report (SIR)-এর ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য করা যায় কি না, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছে। আদালতের মতে, আধার কার্ড এখন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র এবং এর ব্যবহার ক্রমশ সর্বজনীন হয়ে উঠছে। ফলে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে আধারকে যুক্ত করলে প্রক্রিয়া আরও সহজ ও স্বচ্ছ হবে।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

   

সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি মন্তব্য করেন, আধার কার্ড বর্তমানে নাগরিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সরকারি পরিষেবা পাওয়া পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই আধারের ব্যবহার বাড়ছে। তাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এটি যুক্ত হলে সাধারণ ভোটারদের পরিচয় যাচাই করা আরও নির্ভরযোগ্য ও দ্রুততর হতে পারে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আধার কার্ডকে SIR নথিতে গ্রহণ করলে ভুলভ্রান্তি কমবে, জাল পরিচয়পত্র ব্যবহারের আশঙ্কাও অনেকটা হ্রাস পাবে।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকাকে আধার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত তা বাধ্যতামূলক নয়। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, গোপনীয়তা ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন থেকে যায় বলে আধার সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ কমিশনের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। আদালতের ইঙ্গিত অনুযায়ী কমিশনকে খতিয়ে দেখতে হবে, বিহারের মতো বড় ও সংবেদনশীল রাজ্যে SIR প্রক্রিয়ায় আধার অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না।

সম্ভাব্য সুবিধা

যদি SIR-এ আধার কার্ড গ্রহণ করা হয়, তবে ভোটারদের জন্য একাধিক সুবিধা মিলবে—

1. সহজ প্রক্রিয়া – আলাদা আলাদা পরিচয়পত্র দেখানোর ঝামেলা কমে যাবে।

2. নির্ভরযোগ্যতা – আধার কার্ড বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে যুক্ত, ফলে জাল নথি ব্যবহার প্রায় অসম্ভব।

3. দ্রুত সেবা – নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের কাজও সহজ হবে, কারণ তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রুত সম্পন্ন হবে।

4. স্বচ্ছতা – ভোটার তালিকা ও অন্যান্য নথি আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছ হবে।

Advertisements

আশঙ্কা ও প্রশ্ন

তবে শুধুই সুবিধা নয়, এর বিপরীতে কিছু প্রশ্নও উঠছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে—

আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা হলে গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

দেশের অনেক মানুষ এখনও আধার কার্ড পাননি বা তাঁদের আধার তথ্য অসম্পূর্ণ। তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নির্বাচন একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সেখানে আধারকে যুক্ত করলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিহারের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে। শাসকদল মনে করছে, আধার ব্যবহার করলে ভুয়ো ভোটারদের সংখ্যা অনেকটা কমবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির মতে, আধারকে বাধ্যতামূলক করলে ভোটার তালিকা থেকে বহু গরিব ও প্রান্তিক মানুষ বাদ পড়তে পারেন। কারণ তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনও আধার তৈরি করতে পারেননি বা আধারের সঙ্গে তাঁদের তথ্য মিলছে না।

আগামী পদক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচন কমিশনকে এখন বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। কমিশন আধার গ্রহণ করবে কি না, কিংবা আংশিকভাবে গ্রহণ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আদালতের পরামর্শে স্পষ্ট হয়েছে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আধার কার্ড ব্যবহারের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করা যাবে না।