ভারত সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় (Bilateral Sports)একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছে যে ভারতীয় ক্রীড়া দলগুলি পাকিস্তানে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না এবং পাকিস্তানি দলগুলিকেও ভারতে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ক্রীড়া ইভেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রীড়া সম্পর্কের উপর নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলার প্রেক্ষিতে।মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “দ্বিপাক্ষিক ক্রীড়া ইভেন্টের ক্ষেত্রে, ভারতীয় দলগুলি পাকিস্তানে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না।
একইভাবে, আমরা পাকিস্তানি দলগুলিকে ভারতে খেলার অনুমতি দেব না।” তবে, এই নিষেধাজ্ঞা বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যেমন এশিয়া কাপ বা আইসিসি ইভেন্ট, যেখানে ভারত ও পাকিস্তান তৃতীয় কোনো দেশে মুখোমুখি হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা এবং পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ঘোষণা ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ জানিয়েছেন, “ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তানে ভ্রমণ করবে না, এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কোনো সম্ভাবনা নেই।” তিনি আরও বলেন, এশিয়া কাপ ২০২৫-এ ভারত অংশ নেবে, কারণ এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) অনুষ্ঠিত হবে, যা একটি নিরপেক্ষ ভেন্যু।
এই টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তান ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে মুখোমুখি হতে পারে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ।ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রীড়া সম্পর্ক, বিশেষ করে ক্রিকেট, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সীমিত রয়েছে। সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ ২০১২-১৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এরপর থেকে দুই দেশ কেবল আইসিসি টুর্নামেন্ট এবং এশিয়া কাপের মতো বহুপাক্ষিক ইভেন্টে মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারত পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে যায়নি। এই নতুন নীতি সেই অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বলেন, “খেলোয়াড়দের উপর এই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়া উচিত নয়। তারা বিসিসিআই এবং সরকারের নির্দেশ মেনে চলবে।
যদি সরকার মনে করে যে দ্বিপাক্ষিক ইভেন্টে অংশ না নেওয়াই উপযুক্ত, তবে খেলোয়াড়দের তা মেনে নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ম্যাচ ক্রীড়া আত্মার একটি অংশ এবং তা অব্যাহত থাকা উচিত।এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্রিকেট ছাড়াও অন্যান্য খেলা, যেমন হকি, কাবাডি এবং ব্যাডমিন্টনের দ্বিপাক্ষিক ইভেন্টের উপর প্রভাব পড়বে।
ভারতীয় হকি ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা সরকারের নির্দেশ মেনে চলব। তবে, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে প্রস্তুত।” এই নীতি কেবল দ্বিপাক্ষিক ইভেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, এটি দুই দেশের ক্রীড়া সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।এক্স-এ এই ঘোষণা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কিছু ব্যবহারকারী এই সিদ্ধান্তকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে সঠিক বলে মনে করছেন, অন্যরা ক্রীড়াকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ক্রিকেট ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তির সেতু হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা ভক্তদের হতাশ করবে।”
অন্যদিকে, আরেকজন লিখেছেন, “সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রীড়া সম্পর্ক রাখা উচিত নয়।”এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে, বিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, ইউএই বা শ্রীলঙ্কার মতো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খেলাধুলায় উৎসাহ বাড়াতে বড় পদক্ষেপ রাজ্য ক্রীড়া দফতরের
ভারতীয় ক্রিকেট দল বর্তমানে এশিয়া কাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং ভক্তরা আশা করছেন যে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তেজনা অব্যাহত থাকবে।এই নীতি ভারতের ক্রীড়া কূটনীতির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে, ক্রীড়া এবং রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা ভারত ও পাকিস্তানের ক্রীড়া সংগঠনগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।