কোচবিহার (Nishith Pramanik) জেলার দিনহাটা আদালতে হাজিরা দিতে এসে বিক্ষোভ ও হামলার মুখে পড়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক। এই ঘটনায় তাঁর গাড়িকে লক্ষ্য করে ডিম ও পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি আজ, বৃহস্পতিবার, দিনহাটা আদালত চত্বরে সংঘটিত হয়, যা এলাকায় তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
২০১৮ সালে তৃণমূল কর্মী আবু মিয়াঁ নামে এক ব্যক্তির হত্যার অভিযোগে নিশীথ প্রামাণিক সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই সময় নিশীথ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতা ছিলেন, এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে দিনহাটার রাজনীতি তখন প্রায়শই উত্তপ্ত থাকত। এই হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আজ তিনি দিনহাটা আদালতে উপস্থিত হন।
তবে, তাঁর আগমনের খবরে তৃণমূল কর্মীরা আদালত চত্বরের বাইরে জড়ো হয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং তাঁর উপর কঠোর শাস্তির দাবি জানান। এই সময় তাঁর গাড়ির দিকে ডিম ও পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও নিশীথ প্রামাণিক শারীরিকভাবে আহত হননি, তবে এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নিশীথ প্রামাণিক এই হামলাকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো মামলা তুলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। তিনি বলেন, “এই মামলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আদালতের মাধ্যমে ন্যায় পাব।” তবে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে এই হামলা সাধারণ মানুষের ক্ষোভের ফলাফল, এবং তাদের দলের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দিনহাটা আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ স্থানীয় পুলিশ নিশীথ প্রামাণিককে ঘিরে প্রহরার ব্যবস্থা করেছিল। তবে, তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত এবং বিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা নিশীথ প্রামাণিকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন এবং কোচবিহার থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। ২০২১ সালে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক পুরনো মামলা, যার মধ্যে ২০০৯ সালের চুরি ও ভাঙচুরের মামলা এবং ২০১৮ সালের হত্যা মামলা অন্যতম, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ, যিনি দিনহাটার বিধায়ক, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, “নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এবং জনগণ তাঁর কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ। এই বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত।”
বিপরীতে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই হামলাকে তৃণমূলের “সন্ত্রাসের রাজনীতি” বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রাক্তন মন্ত্রীর উপর হামলা তৃণমূলের সন্ত্রাসমূলক মানসিকতার প্রমাণ। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।”
সবজি উৎপাদনে ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় পশ্চিমবঙ্গ
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, বিশেষ করে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে। ২০২৩ সালেও নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল এবং সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনহাটায় এই ঘটনার পর পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিশীথ প্রামাণিক আদালত থেকে নিরাপদে বেরিয়ে গেলেও, এই ঘটনা তাঁর এবং তৃণমূলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক শত্রুতাকে আরও তীব্র করেছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মাসে নির্ধারিত হয়েছে, এবং এটি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে আরও আলোচনার জন্ম দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।