রিভিউ পিটিশনে স্বস্তি নেই, এবার SLP-ই শেষ ভরসা ‘যোগ্য’দের

২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) (SSC)  নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় ফের বড় ধাক্কা খেলেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরা। রিভিউ পিটিশনেও কোনও স্বস্তি মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার…

supreme-court-to-hear-special-leave-petition-today-on-2016-ssc-teachers-job-cancellation

২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) (SSC)  নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় ফের বড় ধাক্কা খেলেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরা। রিভিউ পিটিশনেও কোনও স্বস্তি মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি আর বৈধ নয়। এর ফলে আবারও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢেকে গেল তাঁদের ভবিষ্যৎ। তবে এখানেই লড়াই শেষ মানতে নারাজ ‘যোগ্য’দের একাংশ। তাঁরা এবার আশার আলো দেখছেন স্পেশাল লিভ পিটিশনে (SLP)। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

যোগ্যতার মানদণ্ডে বিতর্ক

   

যোগ্য শিক্ষক–শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল জানিয়েছেন, এই মামলার মূলে রয়েছে যোগ্যতার প্রশ্ন। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অনেকে সাধারণ বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে বিএড প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছিলেন। পরে সেই যোগ্যতাতেই তাঁরা চাকরিতে নিযুক্ত হন। কিন্তু সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে স্নাতকে। তার সঙ্গে থাকতে হবে বিএড। না হলে যোগ্য হিসেবেই ধরা হবে না। এর ফলে পূর্ববর্তী যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিতে ঢোকা অনেকের চাকরি বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। বিশেষ বিএড করা প্রার্থীরাও ২০১৬ সালের পরীক্ষায় সফল হয়ে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এবার থেকে স্পেশাল বিএড প্রার্থীদের জন্য নিয়োগে কোনও সুযোগ থাকবে না। ফলে সেই সময় যারা যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন, বর্তমানে তাঁরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। সব মিলিয়ে এই ধরনের প্রার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা বারোশোরও বেশি।

রিভিউতেও আশাহত

সুপ্রিম কোর্টে ‘যোগ্য’দের (SSC)  চাকরি খারিজ হওয়ার পরই ৩০ ও ৩১ মে নতুন নিয়োগ বিধি ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই রাজ্য সরকার, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ একযোগে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছিল। চাকরি হারানো শিক্ষক–শিক্ষকরাও সেই রিভিউ মামলায় শরিক হয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার আদালত সেই রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে দেয়। ফলে আইনি লড়াইয়ের এক ধাপ শেষে নতুন করে শুরু হল অনিশ্চয়তার পথচলা।

শিক্ষক–শিক্ষিকাদের ক্ষোভ

Advertisements

চাকরিহারা (SSC)  শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এতদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস করানো, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা—সব দায়িত্ব পালন করার পরও তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে। এক ‘যোগ্য’ শিক্ষিকা সঙ্গীতা সাহা বলেন, “আমরা এতদিন নিয়মিত স্কুলে গিয়েছি। নবম–দশম শ্রেণির পরীক্ষা হতে আর মাত্র ১৭–১৮ দিন বাকি। একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হবে ২৫ দিনের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের হঠাৎ নতুন পরীক্ষায় বসতে বলা হচ্ছে। প্রস্তুতির সুযোগও নেই। এতে পড়ুয়াদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে।”

আদালতের দিকেই তাকিয়ে সবাই

স্পেশাল লিভ পিটিশনে শুধু চাকরিই নয়, পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে। কারণ নতুন পরীক্ষায় বসতে হলে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রস্তুতির জন্য অন্তত কিছুটা সময় পাওয়া জরুরি। বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানিতে সেই দাবি কতটা গুরুত্ব পায়, এখন তার দিকেই নজর রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক–শিক্ষিকার।

ভবিষ্যতের লড়াই

প্রশ্ন উঠছে, যদি সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল লিভ পিটিশনেও তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেয়, তবে ভবিষ্যতে এই শিক্ষকদের কী হবে? রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও, সেখানে অনেকের জন্যই আর কোনও সুযোগ নেই। বিশেষ করে যাঁরা আগে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের আজ সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত মনে হচ্ছে।