বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার দাবি সংসদীয় কমিটির

নয়াদিল্লি: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করল সংসদীয় কমিটি। সংসদে (Parliamentary Panel) পেশ হওয়া এক প্রতিবেদনে কমিটি জানিয়েছে,…

Operation Sindoor Parliamentary Debate

নয়াদিল্লি: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করল সংসদীয় কমিটি। সংসদে (Parliamentary Panel) পেশ হওয়া এক প্রতিবেদনে কমিটি জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ওবিসি (OBC)-দের জন্য ২৭ শতাংশ, এসসি (SC)-দের জন্য ১৫ শতাংশ এবং এসটি (ST)-দের জন্য ৭.৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করতে হবে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও।

কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সংরক্ষণ আইন মানতে বাধ্য নয়। এর ফলে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষায় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কমিটি মন্তব্য করেছে—“বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের অনুপস্থিতি আমাদের দেশের সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা।”

   

কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৯৩তম সংশোধনীতে সংযোজিত অনুচ্ছেদ ১৫(৫) অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণ কার্যকর করা সাংবিধানিকভাবে বৈধ। সুপ্রিম কোর্টও একাধিকবার এই ধারা বহাল রেখেছে। ২০১৪ সালের Pramati Educational and Cultural Trust বনাম Union of India মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত অনুচ্ছেদ ১৫(৫)-এর বৈধতা বহাল রাখে।

কমিটি পরামর্শ দিয়েছে, যেভাবে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার অধিকার আইন (RTE Act) অনুযায়ী বেসরকারি স্কুলে ২৫% আসন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক এবং সরকারের তরফে খরচ বহন করা হয়, একই মডেল অনুসরণ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণ কার্যকর করা উচিত।

কমিটি সর্বভারতীয় উচ্চশিক্ষা সমীক্ষা (AISHE) ২০২১-২২-এর তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ৫১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪০টি কেন্দ্রীয় এবং ৪৪৫টি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisements

সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশের পর কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে বলেন, “এসসি, এসটি ও ওবিসি সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি আর উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এই রিপোর্ট সেই দাবিকে নতুন গতি দিয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, কংগ্রেসের ২০২৪ সালের ‘ন্যায় পত্র’ নির্বাচনী ইশতেহারেও এই দাবি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। রমেশের কথায়, “এখন বল রয়েছে মোদি সরকারের কোর্টে।”

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সুযোগ না থাকায় অনেক মেধাবী কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ কার্যকর হলে উচ্চশিক্ষার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজে সমান সুযোগ পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষায় সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবি আরও জোরদার করেছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, মোদি সরকার এই সুপারিশ কার্যকর করতে কোনও পদক্ষেপ নেয় কি না।