মৃত্যুর পরেও মানুষের সেবায় সস্ত্রীক দেহদান সেনা প্রধানের

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান (Army Chief) জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং তাঁর স্ত্রী সুনীতা দ্বিবেদী মৃত্যুর পর তাঁদের দেহদানের প্রতিজ্ঞা নিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বুধবার…

Army Chief body donation

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান (Army Chief) জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং তাঁর স্ত্রী সুনীতা দ্বিবেদী মৃত্যুর পর তাঁদের দেহদানের প্রতিজ্ঞা নিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) দিল্লির আর্মি হাসপাতাল (রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল)-এ আয়োজিত একটি দেহদান সচেতনতা কর্মসূচিতে তাঁরা এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন।

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল দ্বিবেদী এবং তাঁর স্ত্রী, এবং তাঁদের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই প্রতিজ্ঞায় অংশ নেন। এই ঘটনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সেবা পরমো ধর্ম’ (সেবাই সর্বোচ্চ ধর্ম) নীতির প্রতিফলন এবং সমাজের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের একটি শক্তিশালী প্রকাশ।

   

অনুষ্ঠানে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, “একজন সত্যিকারের সৈনিক জীবনে এবং মৃত্যুর পরেও জাতির সেবা করে। দেহদানের মাধ্যমে আমরা মানবতার সেবায় অবদান রাখতে পারি।” তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাঁদের পরিবারকে এই মহৎ উদ্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় অঙ্গদান ও বণ্টন কর্মসূচির অধীনে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে মহিলা প্রাপক এবং দাতার পরিবারকে অঙ্গ বণ্টনের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা দেহদানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হবে।

এই অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী চিকিৎসা সেবার মহাপরিচালক সার্জন ভাইস অ্যাডমিরাল আরতি সারিন সহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সকলের সম্মিলিত প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীর সমাজকল্যাণে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানেও এর আগে তাঁর অঙ্গদানের প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং প্রাক্তন সেনা সদস্য অঙ্গদানের জন্য অঙ্গ ব্যাঙ্কে নিবন্ধন করেছেন।

ভারতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চাহিদা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ, কিন্তু অঙ্গের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (এনওটিটিও)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অঙ্গের অভাবে মারা যান।

এই প্রেক্ষাপটে, সশস্ত্র বাহিনী চিকিৎসা সেবা (এএফএমএস) সৈনিক ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সেনা নেতাদের এই ধরনের প্রতিজ্ঞা প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অন্যদের এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করে।

Advertisements

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস)-এর অর্গান রিট্রিভাল ব্যাঙ্কিং অর্গানাইজেশন (ওআরবিও) জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন অঙ্গদানের জন্য প্রতিজ্ঞা নিতে পারেন অথবা তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের সম্মতিতে অঙ্গদান করা যেতে পারে।

অঙ্গদানের জন্য ওআরবিও’র ওয়েবসাইট (orbo.org) থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে, যার মধ্যে একজন পরিবারের সদস্য হতে হবে, তা পূরণ করতে হয়। এরপর ওআরবিও একটি অঙ্গদাতা কার্ড এবং নিবন্ধন নম্বর প্রদান করে।

জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, যিনি ২০২৪ সালের ৩০ জুন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩০তম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাঁর এই পদক্ষেপ সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের ঐতিহ্যকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেন, “অঙ্গদানকে একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তর করা উচিত।

এটি আমাদের সৈনিকদের জীবনের মাধ্যমে এবং মৃত্যুর পরেও মানবতার সেবা করার প্রতিশ্রুতি।” তাঁর স্ত্রী সুনীতা দ্বিবেদী, যিনি ভোপালের বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য ‘আরুশি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, এই উদ্যোগে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্রতিজ্ঞা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস অর্গান রিট্রিভাল অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন অর্গানাইজেশন (এওআরটিও)-এর প্রচেষ্টাকেও শক্তিশালী করেছে। সামরিক হাসপাতালগুলি দেহদান ও টিস্যু দানের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। জেনারেল দ্বিবেদীর এই পদক্ষেপ অন্যান্য নাগরিকদের মধ্যেও দেহদানের প্রতি আগ্রহ জাগাতে পারে বলে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

ডুরান্ড ফাইনালে ডায়মন্ড হারবার: ক্লাব কর্তা মানস ভট্টাচার্য কী বললেন? দেখুন ভিডিও

এই ঘটনা ভারতের অঙ্গদান আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সেনা প্রধানের এই উদ্যোগ কেবল সৈনিকদের নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে। এটি প্রমাণ করে যে, সেবার মনোভাব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।