শিক্ষার্থীদের জন্য ‘চিভনিং ইউপি অটল স্কলারশিপ’ প্রকল্প শুরু, ঘোষণা যোগী সরকারের

উত্তরপ্রদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে…

Yogi Government’s Chevening UP Atal Scholarship: Empowering Uttar Pradesh Students for UK Education

উত্তরপ্রদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার, যার মাধ্যমে এবার রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা মর্যাদাপূর্ণ চিভনিং (Chevening) স্কলারশিপ প্রোগ্রাম-এর সুবিধা পাবেন। এই চুক্তির ফলে আগামী তিন বছরে প্রতিবছর পাঁচজন করে সর্বমোট ১৫ জন ছাত্রছাত্রী ব্রিটেনে এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পূর্ণ অর্থানুকূল্যে সম্পন্ন করার সুযোগ পাবেন।

নতুন এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি কর্মসূচির নামকরণ করা হয়েছে “চিভনিং ইউপি অটল স্কলারশিপ” ( Chevening UP Atal Scholarship), প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্মৃতিকে স্মরণ করে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে এই উদ্যোগকে। যারা শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, তাঁরাই এই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য হবেন।

   

একজন শিক্ষার্থীর ব্রিটেনে এক বছরের মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করতে গড়ে ৪৫ থেকে ৪৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এই ব্যয় বহন করা হবে যৌথভাবে— অর্ধেক অর্থ দেবে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং বাকি অর্ধেক অর্থ প্রদান করবে যুক্তরাজ্যের Foreign, Commonwealth and Development Office (FCDO)। এর ফলে আর্থিক চাপ ছাড়াই উত্তরপ্রদেশের ছাত্রছাত্রীরা ব্রিটেনে বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন।
এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় লখনৌতে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং ভারতের ব্রিটিশ হাইকমিশনার লিন্ডি ক্যামেরনের উপস্থিতিতে।

অনুষ্ঠানে যোগী আদিত্যনাথ বলেন— “উত্তরপ্রদেশের মেধাবী যুবসমাজকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ দেওয়া আমাদের সরকারের অঙ্গীকার। চিভনিং স্কলারশিপের মাধ্যমে তাঁরা বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হবেন, যা আগামী দিনে রাজ্যের উন্নয়নে সহায়ক হবে।”

ব্রিটিশ হাইকমিশনার লিন্ডি ক্যামেরন ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আজ লখনৌতে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আগামী তিন বছরে প্রতিবছর পাঁচজন করে উত্তরপ্রদেশের ছাত্রছাত্রী যুক্তরাজ্যে পূর্ণ অর্থানুকূল্যে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ পাবেন। এটি যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রতীক।”

চিভনিং স্কলারশিপ প্রোগ্রাম বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৃত্তি। বিশেষ করে ভারত এই প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অংশীদার। ১৯৮৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,৯০০-রও বেশি ভারতীয় ছাত্রছাত্রী এই স্কলারশিপের সুবিধা পেয়েছেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনের মতে, চিভনিং অ্যালামনাইরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বমানের শিক্ষা এবং গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশে ফিরে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁরা কখনও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করেন, কখনও আবার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন।

Advertisements

এবার সরাসরি উত্তরপ্রদেশ সরকার ও ব্রিটিশ সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় রাজ্যের মেধাবীরা ব্রিটেনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। এটি শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের কর্মজীবন এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও বিশাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। রাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, এই উদ্যোগের ফলে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, যা তাঁদের কর্মসংস্থান এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

গত কয়েক বছরে যোগী আদিত্যনাথ সরকার রাজ্যে শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমিক সহযোগিতা— সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশকে শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে সরকার। চিভনিং ইউপি অটল স্কলারশিপ সেই প্রচেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শিক্ষাবিদদের মতে, এই চুক্তি উত্তরপ্রদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্যের যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থাভাবে বিদেশে পড়াশোনা করতে পারছিলেন না, তাঁদের জন্য এটি হবে এক বিরাট সুযোগ। একই সঙ্গে এটি ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্ককেও আরও সুদৃঢ় করবে।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী তিন বছর ধরে প্রতি বছর পাঁচজন করে সর্বমোট ১৫ জন শিক্ষার্থী ব্রিটেনে পূর্ণ বৃত্তিসহ মাস্টার্স করার সুযোগ পাবেন। তবে সফল হলে ভবিষ্যতে এই সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ উত্তরপ্রদেশের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং তাঁদের বৈশ্বিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষ করে তুলবে।