ডিজিটাল যুগে যেমন যোগাযোগের গতি বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে প্রতারণার ফাঁদ। কখনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপডেটের নাম করে, কখনও আবার নামী সংস্থা কিংবা সরকারি অফিসারের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে সাইবার প্রতারকরা। এবার সেই প্রতারণার জালে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। খোদ রাজ্যপালের নামে সাইবার প্রতারণার চেষ্টা চলছে খাস কলকাতাতেই!
সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাজভবনের নাম ব্যবহার করে ভুয়ো ফোন কল, ইমেইল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে রাজ্যপালের দপ্তর থেকে টাকা সাহায্য প্রয়োজন, কখনও আবার সরকারি খাতে অর্থসাহায্য করার জন্য ব্যাংক ডিটেলস দিতে বলা হচ্ছে। এমনকি, বেশ কয়েকজন নাগরিকের কাছে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের আবেদনও পৌঁছেছে রাজ্যপালের নাম ভাঙিয়ে।
রাজভবনের দপ্তরে বিষয়টি পৌঁছনোর পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রাজ্যপালের নজরে আসতেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। রাজভবনের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক সতর্কীকরণ বার্তা জারি করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে
রাজ্যপালের নামে কারও কাছ থেকে টাকা দাবি করা হলে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো।
কোনও ফোন কল, ইমেল বা সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজের মাধ্যমে রাজ্যপালের দপ্তর কখনও আর্থিক লেনদেন করে না।
নাগরিকদের এই ধরনের কল বা মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজভবনের গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এলে বা ইমেল পেলে যাচাই না করে ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য কোনওভাবেই শেয়ার করবেন না। বিশেষ করে ইউপিআই আইডি, ওটিপি, বা এটিএম কার্ড নম্বর শেয়ার করা একেবারেই উচিত নয়।
প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘সাইবার অপরাধীরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য পরিচিত নাম বা পদ ব্যবহার করে থাকে। এবার রাজ্যপালের নাম ভাঙিয়ে টাকা চাওয়ার মতো ঘটনা সত্যিই গুরুতর। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং দোষীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের প্রতারণা নতুন কিছু নয়। অতীতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাজ্যপালের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা চালানোর অভিযোগ বিরল। এর ফলে রাজ্যবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
রাজভবনের জারি করা নির্দেশিকায় সাইবার প্রতারণা থেকে বাঁচার কিছু উপায়ও জানানো হয়েছে—
1. সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
2. অপরিচিত মেসেজে আসা ইউআরএল বা অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করবেন না।
3. সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা অচেনা অনুরোধ বা বার্তায় সাড়া দেবেন না।
4. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য কেবলমাত্র সরকারি পোর্টালে ব্যবহার করুন।
5. যে কোনও সন্দেহজনক বার্তা সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম শাখায় জানান।
নাগরিকদের উদ্দেশে রাজভবনের বার্তা স্পষ্ট— ‘‘সতর্ক থাকুন, প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না। রাজ্যপালের নাম ভাঙিয়ে কেউ টাকা চাইলে বুঝবেন সেটা ভুয়ো এবং অবিলম্বে অভিযোগ করুন।’’
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের প্রতারণা রুখতে প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রতারকরা যতই কৌশল পাল্টাক, সাধারণ মানুষের সচেতনতা থাকলেই তাদের ফাঁদ কার্যত ভেস্তে যাবে। তাই রাজভবনের এই সতর্কীকরণ বার্তা রাজ্যবাসীর জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল প্রতারণার এই যুগে ‘‘সন্দেহ হলেই সতর্ক হোন’’— এটাই একমাত্র মন্ত্র। রাজ্যপালের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার চেষ্টার ঘটনাটি সেই সতর্কতার গুরুত্ব আরও একবার সামনে এনে দিল।