পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ (Mamata Government) সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ২২১৬.৭ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১৬৪৭.৬৯৬ কিলোমিটার এলাকায় ইতিমধ্যে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৫৬৯.০০৪ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া এবং অন্যান্য সীমান্ত পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এই বাকি অংশের মধ্যে ১১২.৭৮০ কিলোমিটার অংশে ভৌগোলিক কারণে বেড়া নির্মাণ সম্ভব নয়, এবং ৪৫৬.২২৪ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া নির্মাণ সম্ভব।
এই তথ্য রাজ্যসভায় একটি লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন যে, সম্ভাব্য ৪৫৬.২২৪ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৭৭.৯৩৫ কিলোমিটারের জন্য জমি ইতিমধ্যে নির্মাণকারী সংস্থার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩৭৮.২৮৯ কিলোমিটারের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
এই বাকি অংশের মধ্যে ১৪৮.৯৭১ কিলোমিটারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ শুরু করেনি, এবং ২২৯.৩১৮ কিলোমিটারের জমি অধিগ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধে বেড়া নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকাগুলি, বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ এবং মালদার মতো জেলাগুলি, অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। এই সীমান্তের বেশিরভাগ অংশ নদী, জলাভূমি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে, যা বেড়া নির্মাণকে আরও জটিল করে তুলেছে।
নিত্যানন্দ রাই আরও জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোন নজরদারি এবং তাপীয় ইমেজিং সিস্টেম। তবে, বেড়া নির্মাণ সম্পন্ন করতে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব এবং জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধিতা এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করছে।পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা এই বেড়া নির্মাণের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে বেড়া নির্মাণ অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান কমাতে সাহায্য করবে, অন্যরা জমি অধিগ্রহণের ফলে তাদের জীবিকা এবং কৃষি কার্যক্রমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে উদ্বিগ্ন।
স্থানীয় একজন কৃষক, মহম্মদ রফিক, বলেন, “আমাদের জমি নিয়ে নিলে আমরা কী করব? সরকারের উচিত আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা।”বিরোধী দলগুলি এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণের জন্য রাজ্যের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু স্থানীয় মানুষের সম্মতি এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
এই বিষয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট।সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান রোধে দুই দেশই যৌথভাবে কাজ করছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে বেড়া নির্মাণে বিলম্ব এবং অসম্পূর্ণ পরিকাঠামো নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিশেষ করে, নদী এবং জলাভূমির মতো অ-সম্ভাব্য এলাকাগুলিতে বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বেড়া নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা সীমান্ত নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তবে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই পরিস্থিতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জটিলতা এবং চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেছে। বেড়া নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন।
অমিত শাহের বিল পেশে উত্তাল লোকসভা, JPC-তে রেফার
পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ মেটাতে এবং তাদের জীবিকার উপর প্রভাব কমাতে সরকারকে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অবৈধ কার্যকলাপ রোধে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।