উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর (Islampur) পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার তালিকায় ব্যাপক গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই ওয়ার্ডে ৮০ জনের বেশি ‘ভুতুড়ে ভোটার’ বা ফেক ভোটারের নাম তালিকায় রয়েছে। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ভোটার তালিকায় এই ধরনের গরমিল নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইসলামপুর পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তদন্তে ৮০ জনের বেশি ভোটারের নাম পাওয়া গেছে, যারা এই এলাকায় বর্তমানে বসবাস করছেন না।
এদের মধ্যে অনেকেই ভিনরাজ্যে চলে গেছেন, তবুও তাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-কে এই বিষয়ে তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও তালিকা থেকে এই ‘ভুতুড়ে’ নামগুলো বাদ দেওয়া হয়নি। এই ঘটনা ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ইসলামপুরে ভোটার তালিকায় গরমিলের এই অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের ভোটার তালিকায় একই ব্যক্তির নাম থাকার অভিযোগ উঠেছিল। ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামপুরে প্রায় ৭০ জনের নাম পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের ভোটার তালিকায় একই সঙ্গে রয়েছে, যা নির্বাচনী নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি ও সিপিএম-এর মতো বিরਸ্থানীয় দলগুলো এই অভিযোগকে ‘ভোটার তালিকায় কারসাজি’ বলে অভিযোগ তুলেছে, যখন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে নীরব রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ‘ভুতুড়ে ভোটার’দের নাম তালিকায় থাকায় নির্বাচনের সময় ভোট জালিয়াতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সিপিএম নেতারা দাবি করেছেন, প্রশাসনের ত্রুটির কারণে এই গরমিল ঘটেছে এবং দ্রুত তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় কোনো ব্যক্তির নাম শুধুমাত্র একটি রাজ্যে বা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারে।
কিন্তু ইসলামপুরের এই ঘটনায় দেখা গেছে, অনেক ভোটারের নাম একাধিক রাজ্যে তালিকাভুক্ত রয়েছে, যা আইনের লঙ্ঘন। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। তবে, নির্বাচন কমিশন এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেনি।
ইসলামপুরের এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলেও ‘ভুতুড়ে ভোটার’ নিয়ে আলোচনাকে উসকে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জলপাইগুড়ির একটি পঞ্চায়েতে ৭০০-র বেশি ভুতুড়ে ভোটারের নাম পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।
স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে, এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে, ভোটার তালিকা থেকে এই ভুতুড়ে নামগুলো বাদ দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা এবং ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শিয়ালদহ–রুবি–বিমানবন্দর মেট্রো রুট চালু, কত লাগবে ভাড়া
এই ঘটনা ইসলামপুরের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। উত্তর দিনাজপুরের এই অঞ্চলটি বহুসাংস্কৃতিক ও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য পরিচিত। এই ধরনের ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে ভোটার তালিকার এই ত্রুটিগুলো দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন।