দুর্গাপুজো ঘিরে সতর্ক বিধাননগর কমিশনারেট, একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা

কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় পুজোর (Durga Puja) আমেজ এখন থেকেই স্পষ্ট। অলিগলি ভরতি থিমের কাজ, আলো সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। তার সঙ্গে তাল…

Durga Puja 2025: Police and Administration Issue Fresh Guidelines to Prevent Mishaps at Pandals

কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় পুজোর (Durga Puja) আমেজ এখন থেকেই স্পষ্ট। অলিগলি ভরতি থিমের কাজ, আলো সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে শপিংয়ের ব্যস্ততাও। তবে এ সব কিছুর মধ্যেও মূল চিন্তা একটাই—দুর্গাপুজোর সময়ে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই এ বছর একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।

দুর্গাপুজো (Durga Puja) এখন আর শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাঙালির সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। লাখ লাখ মানুষ চারদিন ধরে রাস্তায় নামেন, প্যান্ডেল–হপিং করেন, পরিবার–পরিজন নিয়ে উপভোগ করেন উৎসব। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই কারণেই এ বছর অনেক নতুন নির্দেশিকা যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে কখনও এত খোলাখুলি ভাবে প্রয়োগ হয়নি।

   

আলাদা শৌচাগারের বাধ্যবাধকতা

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো মণ্ডপ ও তার আশপাশে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা। আগে অনেক সময় দেখা যেত, দর্শনার্থীরা চত্বর জুড়ে সমস্যায় পড়ছেন শৌচাগারের অভাবে। বিশেষত মহিলাদের জন্য এটি একটি বড় অসুবিধা ছিল। প্রশাসনের মতে, এ বছর যদি প্রতিটি বড় পুজো কমিটি আলাদা শৌচাগার রাখে তবে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে।

পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা

এ বার প্রশাসনের অন্যতম কড়া নির্দেশ হলো, মণ্ডপের ভেতরে এবং বাইরে কোথাও অন্ধকার পরিবেশ রাখা যাবে না। গত বছর একাধিক বড় পুজো কমিটি থিমের সঙ্গে মানানসই করে ইচ্ছে করে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করেছিল। দর্শনার্থীরা তখন চলাফেরায় অসুবিধা অনুভব করেছিলেন। কোথাও কোথাও ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বছর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি প্রবেশপথ, পার্কিং জ়োন ও মণ্ডপ চত্বর ভরতি পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে। থিমের সৌন্দর্য যেমন থাকবে, তেমনই মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।

বেরোনোর পথ হবে প্রশস্ত

ভিড় সামলাতে এ বছর আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মণ্ডপ থেকে বেরোনোর পথ অর্থাৎ ‘এগজ়িট প্যাসেজ’-এ। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে এগজ়িট যেন যথেষ্ট প্রশস্ত হয়, তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে বিপদ ঘটলেও দ্রুত মানুষকে নিরাপদে বের করে আনা যায়।

নতুনত্ব ও সতর্কতার মিশেল

কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা এ বছর কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। গত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছিল, অন্ধকার বা সঙ্কীর্ণ মণ্ডপে ভিড় সামলাতে সমস্যা হচ্ছে। তাই আগেভাগেই সব আয়োজককে সতর্ক করা হচ্ছে।”

এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রাখা হয়েছে নির্দেশিকার মধ্যে—

Advertisements

প্রতিটি বড় মণ্ডপে ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক।

অন্তত একটি অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখতে হবে।

মণ্ডপের ভেতরে ধূপ, ধুনো বা খোলা আগুন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়।

মণ্ডপ চত্বরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।

পুজো কমিটিগুলির প্রতিক্রিয়া

পুজো (Durga Puja) কমিটির অনেক সংগঠক জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকাগুলি প্রথমে কড়াকড়ি মনে হলেও বাস্তবে এগুলি খুবই কার্যকর। একজন আয়োজক বলেন, “দর্শনার্থীরাই আমাদের প্রাণ। তাঁদের অসুবিধা হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে আনন্দ উৎসব ম্লান হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের নিয়ম মেনে চলাই আমাদের দায়িত্ব।”

উৎসবের আনন্দে নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার

দুর্গাপুজো (Durga Puja) এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাঙালির গর্ব। ইউনেস্কোর ইন্ট্যানজিবল হেরিটেজ তালিকায় নাম ওঠার পরে এই উৎসবের মর্যাদা আরও বেড়েছে। ফলে দর্শনার্থীর ভিড়ও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও মানুষ আসেন প্যান্ডেল দেখতে। তাই প্রশাসনের লক্ষ্য একটাই—আনন্দের উৎসব যেন নিরাপত্তার গণ্ডি ভেঙে আতঙ্কের উৎসবে পরিণত না হয়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, এ বার দুর্গাপুজোয় আনন্দের পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকবে জল–আলোর মতো সজাগ। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এই নির্দেশিকা যদি যথাযথভাবে কার্যকর হয়, তবে এবারের উৎসব আরও শান্তিপূর্ণ ও দুর্ঘটনামুক্ত হয়ে উঠবে—এটাই প্রত্যাশা শহরবাসীর।