বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম রয়েছে ভারতে! একবার যাবেন নাকি?

অভাব-অনাহার, বেকারত্ব, ভিখারি—এগুলোই যেন বিশ্বের অনেকের চোখে ভারতের পরিচয়। কেউ কেউ ভারতকে এখনো গরিবের দেশ হিসেবেই দেখেন। কিন্তু এই ভারতেই রয়েছে এমন এক গ্রাম, যা…

Madhapar India's Richest Village

অভাব-অনাহার, বেকারত্ব, ভিখারি—এগুলোই যেন বিশ্বের অনেকের চোখে ভারতের পরিচয়। কেউ কেউ ভারতকে এখনো গরিবের দেশ হিসেবেই দেখেন। কিন্তু এই ভারতেই রয়েছে এমন এক গ্রাম, যা গোটা বিশ্বের কাছে বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম এখন ভারতের গুজরাটের মধপর (Madhapar)।

গুজরাটের কচ্ছ জেলার রত্ন
গুজরাটের কচ্ছ জেলার অন্তর্গত মধপর গ্রাম সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ ছড়িয়ে পড়া একটি তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রামের প্রায় ৯২,০০০ জন বাসিন্দার ব্যাঙ্কে মোট ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫,০০০ কোটি টাকা। ভাবতে পারেন!

   

রেমিট্যান্সে ভর করে ধনী গ্রাম
মধপর গ্রামকে এত ধনী করে তুলেছে এক বিশেষ ইতিহাস। গ্রামের প্রায় ১,২০০ পরিবার বিদেশে, বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও উদ্যোক্তা কার্যকলাপ থেকে উপার্জিত অর্থ নিয়মিত রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠানো হয় গ্রামে। ২০২৩ সালের বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, ভারত মোট ১১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যার বড় অংশই এসেছে গুজরাট থেকে। মধপর সেই সাফল্যের অন্যতম প্রতীক।

সাধারণ চেহারা, অসাধারণ শক্তি
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—এত অর্থনৈতিক শক্তি থাকার পরও মধপর গ্রামের বাড়িঘর বেশ সাধারণ। চোখে পড়ে না বিলাসবহুল প্রাসাদ কিংবা অট্টালিকা। গ্রামবাসীদের মতে, অর্থ জমিয়ে রাখা, শিক্ষা ও সামাজিক কাজে ব্যয় করাই শ্রেয়। এই ‘সংযমী’ মানসিকতা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতার মূল কারণ।

গ্রামে এখন ১৭টি ব্যাঙ্ক শাখা রয়েছে। এসবিআই, আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি—সব বড় ব্যাঙ্কই এখানে অফিস খুলেছে। ফলে মধপর আজ এক প্রকার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত।

Advertisements

গৌরবময় ইতিহাস
শুধু অর্থ নয়, মধপরের গৌরব ইতিহাসেও জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি। তখন মধপর গ্রামের প্রায় ৩০০ জন মহিলা মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দরটি পুনর্নির্মাণ করেন। তাঁদের সেই অবদানই ভারতীয় সেনাকে পাল্টা আক্রমণে সহায়তা করেছিল। ২০১৫ সালে সেই স্মৃতিকে অমর করে রাখতে গ্রামে যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে ভারত সরকার।

শিক্ষা ও আধুনিক সুবিধা
মধপর শিক্ষার ক্ষেত্রেও অগ্রগামী। ১৮৮৪ সালে ছেলেদের জন্য প্রথম সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০০ সালে মেয়েদের স্কুলও গড়ে ওঠে। আজ এখানে আধুনিক হাসপাতাল, উন্নত রাস্তাঘাট, ব্যাঙ্ক শাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে গ্রামবাসীরা শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও উন্নত।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ
আপনি যদি ভ্রমণপ্রিয় হন, মধপর আপনার জন্য বিশেষ গন্তব্য হতে পারে। এখানকার বাড়িঘর বাহ্যিকভাবে সাধারণ হলেও লুকিয়ে আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও অদ্ভুত আর্থিক শক্তি। ভুজ শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম সহজেই পৌঁছনো যায় গাড়ি বা বাসে।

মধপর গ্রাম ভারতের এক আশ্চর্য প্রতিচ্ছবি। যেখানে গ্রামীণ সরলতার আড়ালে লুকিয়ে আছে অগাধ ধনসম্পদ। অর্থনৈতিক শক্তি, ঐতিহাসিক অবদান ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিলনে এটি আজ বিশ্বের নজরে। তাই, যদি ব্যতিক্রমী ভ্রমণের খোঁজে থাকেন, মধপর আপনার তালিকায় রাখতেই পারেন। কে জানে, এই গ্রামে পা রাখলে হয়তো আপনিও নতুন করে ভারতের অন্যরকম চেহারা আবিষ্কার করবেন।