ভারতীয় ক্রিকেট দলের দ্রুতগতির বোলার মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। তাঁর বিচ্ছিন্ন স্ত্রী হাসিন জাহান সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। হাসিন অভিযোগ করেছেন যে শামি তাঁদের মেয়ে আয়রার শিক্ষার জন্য ভালো স্কুলে ভর্তির বিরোধিতা করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, আয়রা ইতিমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। হাসিন আরও দাবি করেছেন যে শামি একজন ‘মহিলাবাজ’ এবং তিনি তাঁর প্রেমিকার সন্তানদের শিক্ষার জন্য ব্যয়বহুল উপহার এবং সুবিধা প্রদান করছেন, কিন্তু আয়রার শিক্ষার খরচ বহন করতে অস্বীকার করছেন।
হাসিন তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, “শত্রুরা চায়নি আমার মেয়ে ভালো স্কুলে ভর্তি হোক, কিন্তু আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছেন। আমার মেয়ে একটি অত্যন্ত ভালো আন্তর্জাতিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মেয়ের পিতা, যিনি একজন কোটিপতি, তিনি মহিলাবাজির কারণে তাঁর মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছেন। তিনি তাঁর প্রেমিকার সন্তানদের এলিট স্কুলে পড়াচ্ছেন, ব্যবসায়িক শ্রেণির ফ্লাইটের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন, কিন্তু নিজের মেয়ের শিক্ষার জন্য টাকা নেই বলে দাবি করছেন।”
পটভূমি এবং আইনি লড়াই
হাসিন জাহান এবং মহম্মদ শামির বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে সংবাদের শিরোনামে রয়েছে। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন হাসিন, যিনি পেশায় একজন প্রাক্তন মডেল এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের চিয়ারলিডার ছিলেন। ২০১৫ সালে তাঁদের কন্যা আয়রার জন্ম হয়। তবে ২০১৮ সালে হাসিন শামির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা, যৌতুক নির্যাতন এবং এমনকি ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ তুলে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন।
কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি শামিকে হাসিন এবং তাঁদের মেয়ের জন্য মাসিক ৪ লক্ষ টাকা ভরণপোষণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে হাসিনের জন্য ১.৫ লক্ষ এবং আয়রার জন্য ২.৫ লক্ষ টাকা। এই রায়কে হাসিন ‘দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে এত দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমি বিজয় পেয়েছি। এখন আমি আমার মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতে পারব এবং তার জীবন সহজভাবে চালাতে পারব। শামির জীবনযাত্রা, তার মর্যাদা এবং আয়ের তুলনায় এই পরিমাণ কিছুই নয়। আমরা সাত বছর আগে আদালতে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলাম। তখন থেকে শামির আয় এবং মুদ্রাস্ফীতি উভয়ই বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “শামি যে মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করেন, আমার এবং আমার মেয়েরও সেই একই মর্যাদা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে।” হাসিনের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, এই ভরণপোষণের পরিমাণ ভবিষ্যতে ৬ লক্ষ টাকায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাসিনের অভিযোগ এবং শামির নীরবতা
হাসিন জাহান তাঁর সামাজিক মাধ্যমে শামির বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে শামি তাঁদের মেয়ে আয়রার সাথে বছরের পর বছর যোগাযোগ করেননি এবং কেবলমাত্র আদালতের চাপে একবার তাঁর সাথে দেখা করেছেন। তিনি শামির ‘অহংকার’ এবং ‘ভুল মানসিকতা’র জন্য তাঁদের পারিবারিক জীবনের অপূরণীয় ক্ষতির জন্য দায়ী করেছেন। এমনকি তিনি শামিকে ‘চরিত্রহীন’ এবং ‘অপরাধী’ বলে অভিহিত করেছেন, দাবি করে যে তিনি অপরাধীদের ভাড়া করে তাঁকে মানসিকভাবে হয়রানি করেছেন।
এদিকে, শামি এই অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি অতীতে বলেছিলেন যে হাসিন কারও দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন, তবে তিনি সাধারণত এই বিষয়ে নীরব থাকতে পছন্দ করেছেন।
হাসিনের পেশাগত জীবন ত্যাগ
হাসিন জাহান জানিয়েছেন যে তিনি বিয়ের আগে মডেলিং এবং অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। শামির ইচ্ছায় তিনি তাঁর পেশা ছেড়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করতে সম্মত হন। তিনি বলেন, “আমি শামিকে এতটাই ভালোবাসতাম যে আমি আনন্দের সাথে এটি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার নিজের কোনও আয় নেই। তাই আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব শামির উপর।”
আইনি ও সামাজিক বিতর্ক
হাসিন এবং শামির এই বিতর্ক কেবল ব্যক্তিগত স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। হাসিনের অভিযোগগুলি সমাজের একাংশের সমর্থন পেলেও, অনেকে মনে করেন যে এই ব্যক্তিগত বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আলোচনার পরিবর্তে আইনি পথে সমাধান করা উচিত।
এছাড়াও, হাসিন নিজেও সম্প্রতি একটি আইনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সুরি শহরে তাঁর মেয়ে আরশির নামে নিবন্ধিত একটি জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে বিরোধের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যদিও এর সত্যতা এখনও যাচাই করা হয়নি।
মহম্মদ শামি এবং হাসিন জাহানের মধ্যে চলমান এই বিতর্ক ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শামির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি বর্তমানে ইনজুরি থেকে সেরে উঠে ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য বাংলার সম্ভাব্য তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তবে এই ব্যক্তিগত বিতর্ক তাঁর পেশাগত জীবনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। অন্যদিকে, হাসিন জাহান আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাঁর এবং মেয়ের অধিকার আদায়ে অটল রয়েছেন। এই ঘটনা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, এবং এই বিষয়ে আরও আইনি ও সামাজিক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।