জলপাইগুড়ি: প্রতিহিংসার আগুন কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা আবারও সামনে এল জলপাইগুড়িতে। মোহিত নগর এলাকায় ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা—প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এক ব্যক্তি ১২টি পথকুকুরকে (Stray Dog) বিষ খাইয়ে হত্যা করলেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে, ক্ষুব্ধ প্রাণপ্রেমীরা ইতিমধ্যেই আইনগত পদক্ষেপে নেমেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির ছাগলকে এলাকার এক পথকুকুর কামড়ে দেয়। সেই কামড়ে ছাগলটির মৃত্যু হয়। এরপরই অভিযুক্তের মনে জন্ম নেয় প্রবল প্রতিশোধস্পৃহা। অভিযোগ, মৃত ছাগলের মাংসে বিষ মিশিয়ে রান্না করে এলাকার পথকুকুরদের খাওয়ান তিনি। ফলে একে একে মৃত্যু হয় মোট ১২টি কুকুরের। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত পলাতক বলে জানা গিয়েছে।
প্রাণপ্রেমী সংগঠন ‘স্পোর’-এর সদস্য গুড্ডু মণ্ডল জানান, “বৃহস্পতিবার আমরা খবর পাই, এই এলাকায় প্রায় ১৩টি কুকুরকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কুকুর এখনও জীবিত, তবে বাকি কুকুরগুলির মৃত্যু হয়েছে। এটা প্রথম নয়—এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার ঘটনার প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।”
স্পোর ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি কোতওয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগপত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রাণী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের (Prevention of Cruelty to Animals Act) ধারা অনুযায়ী কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির এই নৃশংস ঘটনায় রাজ্যের একাধিক প্রাণী-প্রেমী সংগঠন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পরিবেশকর্মী মানেকা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। মানেকা গান্ধী ঘটনাটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্য পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দোষীদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণীরা মানুষের সুরক্ষার ওপর নির্ভরশীল, আর মানুষের দায়িত্ব তাদের রক্ষা করা।”
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন নিজেদের পোষা কুকুর ও বিড়ালকে বাইরে যেতে দিচ্ছেন না। শিশুদেরও একা বাইরে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রাণী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু একটি প্রতিহিংসার কাহিনি নয়, বরং সমাজে প্রাণীদের প্রতি অসংবেদনশীলতা ও নিষ্ঠুরতার একটি বড় উদাহরণ। তাদের মতে, “যদি এই অপরাধের যথাযথ বিচার না হয়, তাহলে এর নজির অন্যদেরও সাহস জোগাবে।”
জলপাইগুড়ি কোতওয়ালি থানার এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তবে তিনি এখনও গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
প্রাণী অধিকার আইনজীবীরা বলছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ ও ৪২৯ ধারায় প্রাণী হত্যা বা আঘাতের জন্য তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়াও, Prevention of Cruelty to Animals Act অনুযায়ী দোষ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে আগামী সপ্তাহে জলপাইগুড়ি শহরে এক বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে স্পোর এবং অন্যান্য প্রাণীপ্রেমী সংগঠন। তাদের দাবি, শুধু অভিযুক্তকে শাস্তি দিলেই হবে না, রাজ্যজুড়ে পথপ্রাণীর সুরক্ষার জন্য বিশেষ নীতি ও নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
জলপাইগুড়ির এই ভয়াবহ ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—প্রতিশোধের আগুন মানুষকে কতটা অমানবিক করে তুলতে পারে, আর তার শিকার হয় নিরস্ত্র, নির্দোষ প্রাণীরা।