breaking Newsঅসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) স্বাধীনতা দিবসে ঘোষণা করেছেন যে তিনি অসমের আদিবাসী জনগণ এবং তাদের পরিচয় রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন। স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে, তাঁর এই বক্তব্য এবং বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে তাঁর আগে করা মন্তব্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মমতা অভিযোগ করেছিলেন যে অসমে বিজেপি সরকার বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার করছে, যা তিনি অসাংবিধানিক এবং বিভাজনমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন।হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অসমে আমরা আমাদের নিজের মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। আমরা সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করছি, যা ইতিমধ্যেই রাজ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।”
তিনি আরও জানান যে কিছু জেলায় হিন্দু জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার পথে। তিনি এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেন এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এই ধরনের অনুপ্রবেশকে ‘বহিরাক্রমণ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক্স পোস্টে বলেন, “বাংলা ভাষা দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথিত ভাষা এবং অসমেও এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
যারা শান্তিপূর্ণভাবে সকল ভাষা ও ধর্মকে সম্মান করে বসবাস করতে চায়, তাদের মাতৃভাষার জন্য অত্যাচার করা অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলক।” তিনি বিজেপির এই ‘বিভাজনমূলক এজেন্ডা’র বিরুদ্ধে অসমের জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন যে তিনি ভাষা, পরিচয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াইরত প্রতিটি নাগরিকের পাশে আছেন।
এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে যখন শর্মা বলেন যে জনগণনায় বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে উল্লেখ করা রাজ্যে ‘বিদেশিদের’ সংখ্যা নির্ধারণে সহায়তা করবে। এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অল বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল মাইনোরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এবিএমএসইউ)-এর নেতা মইনুদ্দিন আলি হুমকি দেন যে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমরা জনগণনায় অসমীয়া ভাষার পরিবর্তে বাংলা লিখবে, যার ফলে অসমীয়া ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারে।
শর্মা এই হুমকির জবাবে বলেন, “ভাষাকে ব্ল্যাকমেলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অসমে অসমীয়া ভাষা স্থায়ী, এটি রাজ্যের এবং সরকারি ভাষা।”তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে শর্মার কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। তৃণমূল নেতা সুষ্মিতা দেব বলেন, “বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এই ধরনের মন্তব্য ভাষাগত প্রোফাইলিং-এর সমতুল্য।”
তিনি আরও বলেন যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। অসমে সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযান, বিশেষ করে গোয়ালপাড়া এবং ধুবড়ি জেলায়, বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল এবং অন্যান্য বিরোধী দল দাবি করেছে যে এই উচ্ছেদ অভিযানে অনেক ভারতীয় নাগরিকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শর্মা তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে অসমে অসমীয়া, বাংলা, বোডো এবং হিন্দি—সকল ভাষা ও সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। তবে, তিনি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ভিত্তি এবং সীমান্ত রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি মমতাকে অভিযোগ করেন যে তিনি পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করছেন এবং ভোটব্যাঙ্কের জন্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তোষণ করছেন।
নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার-পুলিশকে মার, গ্রেফতার আরও ১
এই বিতর্ক অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অসমের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলি এই বিষয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যখন তৃণমূল কংগ্রেস বাংলা ভাষাভাষীদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন জোরদার করছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।