স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day) আবহে পঞ্জাব পুলিশ গত বৃহস্পতিবার একটি বড়সড় জঙ্গি ষড়যন্ত্র বানচাল করেছে, যা পাকিস্তান-ভিত্তিক বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই) জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হরউইন্দর সিং রিন্দার নেতৃত্বে পরিকল্পিত হয়েছিল। এই অভিযানে দুজন সন্দেহভাজন বিকেআই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা সরকারি স্থাপনা ও পুলিশ প্রতিষ্ঠানে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করছিল। এই ঘটনা স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ঘটেছে, যা পঞ্জাবের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করছে।
অভিযানের বিবরণ
পঞ্জাব পুলিশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স (সিআই) ফিরোজপুর ইউনিটের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিজিপি) গৌরব যাদব জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তালওয়ান্দি ভাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন তর্ন তারনের ভুল্লার গ্রামের বাসিন্দা হরপ্রীত সিং ওরফে প্রীত এবং আমৃতসরের রামপুরা গ্রামের বাসিন্দা গুলশান সিং ওরফে নান্দু। তাদের কাছ থেকে দুটি ৮৬পি হ্যান্ড গ্রেনেড এবং একটি ৯ মিমি বেরেটা পিস্তল সহ পাঁচটি জীবন্ত কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এই অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে তারা সরকারি ভবন এবং পুলিশ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে অভিযান
এই গ্রেফতারের ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে, যখন দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর মাত্র দুদিন আগে, ১২ই আগস্ট, পঞ্জাব পুলিশ রাজস্থানের টঙ্ক এবং জয়পুর জেলায় আরেকটি বিকেআই জঙ্গি মডিউল ভেঙে দেয়, যেখানে পাঁচজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন নাবালক ছিল এবং তাদের কাছ থেকে একটি ৮৬পি হ্যান্ড গ্রেনেড এবং একটি .৩০ বোর পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছিল। ডিজিপি যাদব জানিয়েছেন, এই দুটি অভিযানই পাকিস্তানের আইএসআই-সমর্থিত বিকেআই জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য।
বিদেশি হ্যান্ডলারদের ভূমিকা
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে অবস্থানরত বিদেশি হ্যান্ডলারদের নির্দেশে কাজ করছিল। এই হ্যান্ডলারদের মধ্যে রয়েছেন জীশান আখতার এবং মান্নু আগওয়ান, যারা পাকিস্তান-ভিত্তিক বিকেআই নেতা হরউইন্দর সিং রিন্দার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছিল। তদন্তে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে এই জঙ্গিরা পঞ্জাবের শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করতে সরকারি ভবন এবং পুলিশ স্থাপনায় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করছিল। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থন ছিল বলে দাবি করেছে পঞ্জাব পুলিশ।
অভিযানের বিস্তারিত তথ্য
ফিরোজপুরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) গুরসেবাক সিং ব্রার জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তালওয়ান্দি ভাই এলাকায় অভিযান চালায় এবং হরপ্রীত এবং গুলশানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে দেশ-বিদেশের সহযোগীদের সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনায় ফাজিলকা থানায় অস্ত্র আইনের ২৫ ধারা এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৩, ৪, এবং ৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী অভিযান ও জঙ্গি নেটওয়ার্ক
এই অভিযানের আগে, ১২ই আগস্ট পঞ্জাব পুলিশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স জালন্ধর এবং এসবিএস নগর পুলিশের যৌথ অভিযানে বিকেআই-এর আরেকটি জঙ্গি মডিউল ভেঙে দেওয়া হয়। এই অভিযানে রাজস্থান থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়, যারা স্বাধীনতা দিবসের সময় শহীদ ভগৎ সিং নগরে হামলার পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতারের সময় একজন জঙ্গি পুলিশের উপর গুলি চালায়, এবং পাল্টা গুলিতে সে আহত হয়। তাকে এসবিএস নগরের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পঞ্জাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পঞ্জাব পুলিশের এই অভিযানগুলি রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা প্রমাণ করে। সম্প্রতি, পঞ্জাব দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সীমান্তে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ‘বাজ আখ’ স্থাপন করেছে, যা সীমান্তের মাধ্যমে ড্রোন-ভিত্তিক অস্ত্র ও মাদক পাচার রোধে কার্যকর। এই সিস্টেমের জন্য ৫১.৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
পঞ্জাব পুলিশের এই সাফল্য স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাজ্যের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। হরউইন্দর সিং রিন্দার মতো বিদেশি জঙ্গি নেতাদের পরিকল্পনা বানচাল করা এবং তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করা পঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দা দক্ষতার প্রমাণ। তবে, তদন্ত এখনও চলছে, এবং আরও তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ। এই ঘটনা পঞ্জাবের সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসেবে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।