ধাক্কার জেরে চড়, মুহূর্তে নিথর হাওড়ার ভ্যানচালক

হাওড়ার (Howrah) ব্যস্ততম বেনারস রোডে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা মুহূর্তে কেড়ে নিল এক মানুষের প্রাণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, সকাল প্রায় ১১টা নাগাদ…

Howrah: Man Slaps Van Driver After Minor Accident, Driver Dies on the Spot

হাওড়ার (Howrah) ব্যস্ততম বেনারস রোডে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা মুহূর্তে কেড়ে নিল এক মানুষের প্রাণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, সকাল প্রায় ১১টা নাগাদ একটি হাই স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল ভ্যানচালক অলোক নস্কর (৫৩)। তাঁর ভ্যানে তখন টালি বোঝাই ছিল। হঠাৎই কোনও কারণে ভ্যানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন অলোক। সেই অবস্থায় সামনে থাকা এক পথচারীকে ধাক্কা দেন তিনি। ধাক্কা খাওয়া পথচারীর নাম অসীম দাস (৫২)।

ঘটনাস্থলে (Howrah) উপস্থিত একাধিক মানুষের দাবি, ধাক্কা লাগার পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন অসীম। প্রথমে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বচসা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, অসীম হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে সজোরে একটি চড় কষিয়ে দেন অলোকের মুখে। চড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন অলোক। উপস্থিত লোকজন প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো চড়ের আঘাতে সাময়িক মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বোঝা যায়, পরিস্থিতি গুরুতর।

   

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অলোককে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে আসে হাওড়া থানার পুলিশ। অভিযুক্ত অসীম দাসকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত অলোক নস্কর পেশায় একজন ভ্যানচালক, স্থানীয় এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করতেন। সেই দিন তাঁর ভ্যানে যে টালি বোঝাই ছিল, তা একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভ্যানের ভারসাম্য কোনও কারণে নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখান থেকেই ঘটে বিপত্তি। অসীম দাসও স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি প্রতিদিনের মতো এ দিনও হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখনই ধাক্কা লাগে।

স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, ঘটনাটি আরও ঠান্ডা মাথায় সামলানো যেত। রাগের বশে মারধর না করলে হয়তো অলোক নস্করের প্রাণ যেত না। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, ধাক্কার পর হঠাৎ উত্তেজনায় চড় মারা হলেও এমন পরিণতি হবে, তা হয়তো অভিযুক্ত নিজেও ভাবতে পারেননি। তবুও, আইন অনুযায়ী এই ঘটনাকে অপ্রাকৃত মৃত্যু এবং সম্ভাব্য আঘাতজনিত হত্যাকাণ্ড—দুটি দিক দিয়েই দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisements

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাওড়ার কোনা ও বেনারস রোড সংলগ্ন এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। দোকানপাটে, পাড়ার আড্ডায় একটাই প্রশ্ন—সামান্য ধাক্কা থেকে কি করে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে? কেউ বলছেন, বর্তমানে মানুষের সহনশীলতা কমে গেছে, রাস্তায় সামান্য ধাক্কা, হর্ণ বা তর্কও বড় ঘটনার রূপ নিচ্ছে।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, চড়ের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে বা হঠাৎ শক লেগে হার্ট অ্যাটাক হয়েই মৃত্যু হয়েছে অলোক নস্করের। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

এই ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, রাস্তায় চলাচলের সময় ধৈর্য হারানো বা রাগের বশে সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখানো কতটা মারাত্মক হতে পারে, তার জীবন্ত প্রমাণ এই ঘটনা। সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই খবর ভাইরাল হয়েছে। বহু মানুষ মন্তব্য করছেন—মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা এবং সংযম ফিরিয়ে আনা জরুরি, নইলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা বাড়বে।

সামান্য ধাক্কা, ক্ষণিকের রাগ, আর একটি চড়—এই তিনটি মিলেই শেষ হয়ে গেল ৫৩ বছরের এক পরিশ্রমী ভ্যানচালকের জীবন। এখন প্রশ্ন একটাই—আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কী জবাব দেবেন অভিযুক্ত অসীম দাস? আর এই ঘটনার পর মানুষ কি একটু বেশি ধৈর্যশীল হবেন রাস্তায়?