রাজ্যের নাগরিক সমস্যা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন উদ্যোগ ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়া ফেলেছে। সরকারি আধিকারিকেরা সরাসরি মানুষের দরজায় গিয়ে সমস্যা শুনছেন ও সমাধানের পথ খুঁজছেন। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের কোনিয়ারা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবিরে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা রাজনীতির অন্দরে হইচই ফেলে দিয়েছে—বিরোধী দল বিজেপিরই গ্রামপ্রধান (BJP Gram Pradhan) সমীর বিশ্বাস প্রকাশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
করঙ্গ এফপি স্কুলে আয়োজিত ওই শিবিরে উপস্থিত থেকে সমীরবাবু বলেন, “প্রধানের চেয়ারে বসে রাজনীতি করা যায় না। সরকারি প্রকল্প সবার। এই টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা, যদি সঠিক কাজে লাগে, তাহলে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।” তাঁর এই মন্তব্যে মুহূর্তেই সাড়া পড়ে যায়। কারণ, বিজেপির একজন নির্বাচিত প্রধান প্রকাশ্যে তৃণমূল সরকারের প্রশংসা করলেন—যা গেরুয়া শিবিরে একেবারেই বিরল।
তৃণমূল কংগ্রেস স্বাভাবিকভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল ঘোষ সমীর বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “প্রধান নিজের জাগ্রত বিবেক থেকে বুঝেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের কাজ করছেন। বিজেপির অনেক নেতা সরকারের ভালো কাজ চোখে দেখতে পারেন না, কিন্তু উনি সত্যিটা বলতে পেরেছেন।” একই সুরে বাগদা বিধানসভার তৃণমূল আইটি সেলের সভাপতি জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “বিজেপি নেতারা সাধারণত মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন, কিন্তু সমীরবাবুর বক্তব্য প্রশংসনীয়। বিরোধী হয়েও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর আছে।”
অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনার জন্য সরাসরি অস্বস্তিতে পড়েছে। বনগাঁ জেলা বিজেপি সভাপতি বিকাশ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “উনি ওই শিবিরে গিয়ে থাকলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। দল এই ধরনের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে না।” তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে গ্রামপ্রধানের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে দেখা হচ্ছে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে। যেখানে বিজেপি লাগাতার তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করছে, সেখানে দলের একজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের প্রশংসা করলেন—এটি শুধু বিজেপির ভিতরেই নয়, সমগ্র জেলার রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
সমীর বিশ্বাস অবশ্য নিজের অবস্থান স্পষ্ট রেখেছেন। তাঁর মতে, সরকারি প্রকল্প মানুষের জন্য, দলীয় রাজনীতির জন্য নয়। “কে কি বলছে সেটা আমার দেখার সময় নেই। ভালো কিছু হলে সেটা বলা উচিত,”—এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের প্রশংসা একদিকে মানুষের কাছে গ্রামপ্রধানের ভাবমূর্তি উন্নত করতে পারে, অন্যদিকে দলের ভিতরে তাঁর অবস্থানকে দুর্বল করে তুলতে পারে। বিশেষত, নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনা বিরোধী শিবিরে ভাঙন বা অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হতে পারে।
ফলে, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শুধু নাগরিক সমস্যার সমাধানই নয়, এখন রাজনীতির অন্দরেও নতুন বিতর্ক ও মেরুকরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।