বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের অন্নের জোগান নিশ্চিত করতে চাল আমদানির (Rice Price) বড় সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা। সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার লক্ষ ৬১ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চালের বরাত দেওয়া হয়েছে মোট ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বরাদ্দ অনুযায়ী চাল বাংলাদেশে গুদামজাত করতে হবে।
এ বছর বাংলাদেশ মোট ন’লক্ষ মেট্রিক টন চাল (Rice Price) আমদানি করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চার লক্ষ মেট্রিক টনের দায়িত্ব থাকবে সরকারি সংস্থাগুলির হাতে। জুলাই–অগস্ট মাসে অতিবৃষ্টির কারণে ধানের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, যা এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে। খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় কয়েক মাস ধরেই রপ্তানি ও আমদানি নীতিতে দোলাচল চলছিল। অবশেষে ১০ অগস্ট চাল আমদানির জন্য দরপত্র প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রক।
বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪–২০২৫ অর্থবর্ষে দেশটি ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল(Rice Price) আমদানি করেছিল, যা তাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ আট লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে, যার বড় অংশ এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বিশেষত হুগলি, বর্ধমান ও বীরভূমের মতো জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ চাল রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশে এ বছর রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাজারে চালের দাম চড়তে শুরু করেছে। চালকল মালিকদের দাবি, গত দেড় মাসে গড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খুচরো বাজারে তার প্রভাব স্পষ্ট। যেখানে কয়েক মাস আগে যে চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩২ টাকা, এখন তা ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা হয়ে গিয়েছে।
রাজ্য রাইস মিল (Rice Price) সংগঠনের কর্তা দীপক প্রামানিক জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ চাল আমদানির টেন্ডার দিলেও এর কতটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে রপ্তানি হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ বাংলা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড় থেকেও চাল বাংলাদেশে যায়।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের চাহিদা বাড়লে অবশ্যই স্থানীয় বাজারে চাপ পড়বে, আর দামও কিছুটা বাড়তে বাধ্য।”
অন্যদিকে, পাইকারি বাজারে চালের (Rice Price) চাহিদা বাড়ায় মজুতদাররা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অনেক ব্যবসায়ী এখনই চাল গুদামজাত করে রাখছেন ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির আশায়। এর ফলে সাধারণ ক্রেতারা বাজারে গিয়ে অতিরিক্ত দাম গুনতে বাধ্য হচ্ছেন। খাদ্য দফতরের সূত্রে খবর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে এবং প্রয়োজন হলে মজুতদারি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের আমদানি নীতি পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য অবশ্য এক ধরনের সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, রপ্তানির সুযোগ পেলে তারা ভালো দাম পাবেন, যা ধান চাষে উৎসাহ বাড়াবে। তবে এর ফলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমে গেলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, তাই রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মুহূর্তে চালের বাজারে চাপ বাড়ার অন্যতম কারণ হল আঞ্চলিকভাবে সরবরাহ চেইনের পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের (Rice Price) চাহিদা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে বন্যার কারণে উৎপাদন হ্রাস এবং ভারতের কিছু রাজ্যে অতিবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়া—সব মিলিয়ে মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে বাংলাদেশ কবে এবং কী পরিমাণ চাল আমদানি সম্পন্ন করে এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানিতে কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কি না, তার উপর। আপাতত পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে একটাই প্রশ্ন—চালের থালা ভরতে গিয়ে কি আরও গভীর হবে পকেটের চাপ?