দূরবর্তী কাজের সংস্কৃতি কি সল্টলেক টেক জোনে অফিস স্পেসের অস্তিত্ব হুমকির মুখে?

কলকাতার সল্টলেক সেক্টর V, যা সল্টলেক টেক জোন নামে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এই এলাকায়…

Remote Job Culture Threatening Office Spaces in Salt Lake Tech Zone

কলকাতার সল্টলেক সেক্টর V, যা সল্টলেক টেক জোন নামে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এই এলাকায় অসংখ্য আইটি কোম্পানি, স্টার্টআপ এবং বহুজাতিক সংস্থার অফিস রয়েছে, যা হাজার হাজার কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীতে পরিবর্তনের পর, দূরবর্তী কাজ বা রিমোট জবের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে সল্টলেকের ঐতিহ্যবাহী অফিস স্পেসগুলোর চাহিদা এবং ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, দূরবর্তী কাজের (Remote Job) এই নতুন সংস্কৃতি কি সল্টলেক টেক জোনে অফিস স্পেসের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে?

দূরবর্তী কাজের উত্থান এবং এর প্রভাব
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে দূরবর্তী কাজ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ভারতের আইটি শিল্পে একটি নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। অনেক কোম্পানি, বিশেষ করে আইটি এবং সফটওয়্যার সেক্টরে, তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। এই প্রবণতা শুধুমাত্র কর্মীদের জন্য নমনীয়তা এবং সুবিধা এনেছে তা নয়, বরং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস স্পেসের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যয়ের ধারণাকেও বদলে দিয়েছে। ফোর্বসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূরবর্তী কাজের ফলে শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অফিস এবং খুচরা সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পেতে পারে, যা সল্টলেকের মতো আইটি হাবগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

   

সল্টলেক সেক্টর V-তে, যেখানে অসংখ্য আইটি কোম্পানির অফিস অবস্থিত, অনেক প্রতিষ্ঠান এখন হাইব্রিড কাজের মডেল গ্রহণ করেছে। এই মডেলে কর্মীরা সপ্তাহে মাত্র কয়েকদিন অফিসে আসেন, বাকি সময় বাড়ি থেকে কাজ করেন। ফলে, অনেক কোম্পানি তাদের অফিসের জায়গা কমিয়ে দিচ্ছে বা সম্পূর্ণভাবে ভাড়া বাতিল করছে। এর ফলে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের চাহিদা কমে গেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতি এবং সম্পত্তির মূল্যের উপর প্রভাব ফেলছে।

কো-ওয়ার্কিং স্পেস: নতুন সমাধান?
দূরবর্তী কাজের এই প্রবণতার মধ্যে কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলো একটি বিকল্প সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে। কলকাতায়, বিশেষ করে সল্টলেক এবং নিউটাউন এলাকায়, অসংখ্য কো-ওয়ার্কিং স্পেস গড়ে উঠেছে। এই স্পেসগুলো ফ্রিল্যান্সার, স্টার্টআপ এবং ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের জন্য নমনীয় কাজের পরিবেশ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, AKASA Coworking Kolkata এবং Awfis Camac Street-এর মতো কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, হাই-স্পিড ইন্টারনেট এবং সম্মেলন কক্ষ সরবরাহ করে, যা দূরবর্তী কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয়। এই স্পেসগুলোতে কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ডেস্ক বা অফিস ভাড়া নিতে পারেন, যা ঐতিহ্যবাহী অফিস ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলো শুধুমাত্র কাজের জায়গা প্রদান করে না, বরং একটি সম্প্রদায়ের অনুভূতি তৈরি করে। এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন, যা নেটওয়ার্কিং এবং সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, Blob Coworking Space এবং Chowringhee Court Chambers-এর মতো জায়গাগুলো তাদের প্রাণবন্ত পরিবেশ এবং অতিরিক্ত সুবিধা, যেমন ক্যাফে এবং ইভেন্ট স্পেসের জন্য জনপ্রিয়। এই ধরনের স্পেসগুলো দূরবর্তী কাজের একাকীত্ব কমাতে সাহায্য করে, কারণ এখানে কর্মীরা অন্যান্য পেশাদারদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারেন।

সল্টলেক টেক জোনের চ্যালেঞ্জ
যদিও কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলো একটি সমাধান হিসেবে কাজ করছে, তবুও সল্টলেকের বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট বাজারে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ফোর্বসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূরবর্তী এবং হাইব্রিড কাজের ফলে অফিস স্পেসের চাহিদা কমে যাওয়ায় সম্পত্তির মূল্য এবং ভাড়ার পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক, কারণ অফিস স্পেস থেকে প্রাপ্ত রিয়েল এস্টেট ট্যাক্স শহরের পাবলিক প্রকল্প এবং পরিষেবাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়নের উৎস। সল্টলেকের মতো এলাকায়, যেখানে আইটি শিল্প শহরের অর্থনীতির একটি বড় অংশ, এই পরিবর্তনের প্রভাব আরও স্পষ্ট।

Advertisements

এছাড়াও, দূরবর্তী কাজের ফলে কর্মীদের মধ্যে সংস্থার সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফোর্বসের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূরবর্তী কাজের পরিবেশে কর্মীরা একাকীত্ব অনুভব করতে পারেন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কমে যায়। এটি বিশেষ করে সল্টলেকের মতো এলাকায় সত্য, যেখানে অফিসগুলো একসময় কর্মীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে কাজ করত।

ভবিষ্যতের পথ
সল্টলেক টেক জোনের অফিস স্পেসগুলোর ভবিষ্যত নির্ভর করছে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের নমনীয়তা এবং বৈচিত্র্যের উপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অফিস স্পেসগুলোকে বহুমুখী করতে হবে, যেমন অফিস এবং আবাসিক বা হোটেলের সমন্বয়। এছাড়াও, কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলোর মতো নমনীয় সমাধানগুলো আরও জনপ্রিয় হচ্ছে। সিকিমের ইয়াকটেন গ্রামে ভারতের প্রথম ডিজিটাল নোম্যাড ভিলেজের উদাহরণ দেখায়, কীভাবে গ্রামীণ এলাকায়ও দূরবর্তী কাজের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা যায়।

সল্টলেক টেক জোনের জন্য, কোম্পানিগুলোকে নতুনভাবে ভাবতে হবে কীভাবে তারা তাদের কর্মীদের সংযুক্ত রাখবে এবং অফিস স্পেসের ব্যবহার অপ্টিমাইজ করবে। হাইব্রিড মডেল, কো-ওয়ার্কিং স্পেস এবং নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই এলাকা তার গুরুত্ব ধরে রাখতে পারে। তবে, এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং জোনিং নিয়মের পরিবর্তন।

দূরবর্তী কাজের সংস্কৃতি সল্টলেক টেক জোনের অফিস স্পেসের ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলো এই পরিবর্তনের একটি সমাধান হলেও, দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এড়াতে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটে নমনীয়তা এবং উদ্ভাবন প্রয়োজন। সল্টলেকের আইটি হাব হিসেবে গুরুত্ব বজায় রাখতে হলে, এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং নতুন সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।