ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর অনিশ্চয়তার মধ্যেও কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়ী এফসি গোয়া আগামীকাল ১৩ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামতে প্রস্তুত। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্লে-অফ ম্যাচে ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ওমানের শক্তিশালী দল আল সিবের মুখোমুখি হবে গোয়া। এই ম্যাচে জয়ই এফসি গোয়াকে ২০২৫-২৬ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে নিয়ে যাবে। হারের ক্ষেত্রে, তাদের এশিয়ান যাত্রা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে, এশিয়ার তৃতীয় স্তরের ক্লাব প্রতিযোগিতায়, চলবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এফসি গোয়ার প্রধান কোচ ম্যানোলো মার্কেজ (Manolo Marquez) সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি প্রতিপক্ষ আল সিব, প্রতিযোগিতার গুরুত্ব এবং সমর্থকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ম্যানোলো মার্কেজের আল সিব সম্পর্কে মন্তব্য
ওমানের আল সিব গত কয়েক বছরে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। তারা গত ছয় মরশুমে চারবার ওমানি লিগ জিতেছে এবং ২০২২ সালে এএফসি কাপ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, যা ওমানের কোনো দলের প্রথম এএফসি কাপ জয়। আল সিবের দলে ওমানের জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা বর্তমানে ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে লড়াই করছে।
মার্কেজ আল সিব সম্পর্কে বলেন, “যখন আপনি মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় খেলেন, তখন জানেন যে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হবে। আমরা জানি আল সিব কীভাবে খেলে এবং তাদের খুব ভালো খেলোয়াড় রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ওমানের ফুটবল এখন অনেক উন্নতি করছে, এবং তারা বিশ্বকাপের জন্য বাছাইপর্বে লড়ছে। আল সিবের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলেন। স্পষ্টতই এই ম্যাচ আমাদের জন্য সহজ হবে না, তবে তাদের জন্যও সহজ হবে না। আমি মনে করি এটি একটি সমান ম্যাচ হবে।”
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গুরুত্ব
এই ম্যাচ ম্যানোলো মার্কেজের জন্য মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম কোচিং অভিজ্ঞতা হবে। এর আগে তিনি কখনো এশিয়ান বা ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতায় কোচিং করেননি। এই সুযোগে তিনি উৎসাহিত এবং সম্মানিত বোধ করছেন। মার্কেজ বলেন, “আমরা যদি আগামীকাল জিতি, আমি খুব খুশি হব কারণ এই ক্লাব এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ চলতে পারার যোগ্য। আমি আগেও বলেছি, আমার মতে এই দল ভারতের সবচেয়ে সুসংগঠিত ক্লাব। এটি সমর্থকদের, ক্লাবের এবং খেলোয়াড়দের জন্য অনেক কিছু বোঝায়।”
তিনি আরও জানান, “খেলোয়াড়রা খুব কঠোর পরিশ্রম করছে। আমি বলতে চাই যে তারা খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আগামীকাল জিততে পারি।” মার্কেজের এই মন্তব্য দলের মনোবল এবং প্রস্তুতির প্রতিফলন ঘটায়। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ জায়গা করে নেওয়া এফসি গোয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি ক্রীড়াগত অর্জনই নয়, বরং ভারতীয় ফুটবলে তাদের প্রভাব বাড়ানোর একটি সুযোগ।
সমর্থকদের প্রতি মার্কেজের বার্তা
আল সিবের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ এফসি গোয়ার জন্য ‘সব বা কিছুই নয়’ ধরনের লড়াই। হোম গ্রাউন্ডে খেলার চাপ থাকলেও, মার্কেজ সমর্থকদের সমর্থনের উপর ভরসা রাখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের শেষ প্রেস কনফারেন্স ফতোর্ডায় ছিল, যখন আমরা আইএসএল সেমিফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসির কাছে হেরে যাই। আমি বলেছিলাম, সেদিন সমর্থকদের এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে যে সংযোগ দেখেছিলাম, তা গোয়ায় আমি আগে কখনো দেখিনি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি বলেছিলাম যে এই সংযোগ আমাদের সুপার কাপে ভালো করতে সাহায্য করবে, এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সুপার কাপ জিতেছি। এখন আমরা এশিয়ান প্রতিযোগিতায় রয়েছি এবং আমি আশা করি আগামীকাল সমর্থকরা প্রচুর সংখ্যায় এসে তাদের দলকে সমর্থন করবেন।” মার্কেজ জোর দিয়ে বলেন, “ফতোর্ডায় প্রচুর মানুষের সঙ্গে খেলার অনুভূতি অসাধারণ। যখন সমর্থকরা আপনার দলের পক্ষে থাকে, তখন অনুভূতিটা খুব ভালো।”
কলকাতার ডার্বি: মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল
এদিকে, ডুরান্ড কাপ ২০২৫-এর কোয়ার্টার ফাইনালের সূচি চূড়ান্ত হয়েছে, এবং এটি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত নিয়ে এসেছে। আগামী ১৭ আগস্ট, কলকাতার দুই প্রধান ক্লাব, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ইমামি ইস্টবেঙ্গল, কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় একটি হাইভোল্টেজ ডার্বি ম্যাচে মুখোমুখি হবে। এই নকআউট ম্যাচটি কলকাতার ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। বিগত কয়েকদিন ধরে এই ম্যাচ নিয়ে জল্পনা চলছিল, এবং অবশেষে এটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
মোহনবাগান গত মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে হেরেছিল, তবে এবার তারা তাদের ঘরের মাঠে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলও তাদের সমর্থকদের সামনে এই ডার্বিতে জয়ের জন্য মরিয়া। এই ম্যাচটি শুধুমাত্র একটি কোয়ার্টার ফাইনালই নয়, বরং কলকাতার ফুটবল ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এফসি গোয়ার চ্যালেঞ্জ
এফসি গোয়ার জন্য আল সিবের বিরুদ্ধে ম্যাচটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। মার্কেজের নেতৃত্বে দলটি তিনটি নতুন বিদেশি খেলোয়াড়—জাভিয়ের সিভেরিও, ডেভিড টিমোর, এবং পল মোরেনো—নিয়ে দলকে শক্তিশালী করেছে। মার্কেজ এই খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার উপর ভরসা রাখছেন, তবে তিনি জোর দিয়েছেন যে দলের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “এটি একটি সমান ম্যাচ হবে, এবং আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সেরাটা দিতে হবে।”
ম্যানোলো মার্কেজের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি আল সিবকে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে সম্মান করেন, তবে এফসি গোয়ার সম্ভাবনার প্রতি আত্মবিশ্বাসী। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ জায়গা করে নেওয়া এফসি গোয়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে। সমর্থকদের সমর্থন এবং দলের কঠোর পরিশ্রম এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে, ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ভারতীয় ফুটবলের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আগামী দিনগুলো ভারতীয় ফুটবলের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ হতে চলেছে।