প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশনের (Semiconductor) অধীনে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে মোট ৪,৫৯৪ কোটি টাকার বিনিয়োগে চারটি নতুন সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে দুটি কারখানা ওড়িশায়, একটি অন্ধ্রপ্রদেশে এবং একটি পাঞ্জাবে স্থাপিত হবে।
এই প্রকল্পগুলি ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রায় ২,০৩৪টি দক্ষ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং পরোক্ষভাবে আরও অনেক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করবে। এই সিদ্ধান্ত ভারতকে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
ওড়িশার ভুবনেশ্বরের ইনফো ভ্যালিতে দুটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট স্থাপিত হবে। প্রথমটি, সিকসেম প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ক্লাস-সিক ওয়েফার ফ্যাব লিমিটেডের সঙ্গে সহযোগিতায় ২,০৬৬ কোটি টাকার বিনিয়োগে ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক সিলিকন কার্বাইড (সিক) ভিত্তিক কম্পাউন্ড সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট স্থাপন করবে।
এই ইউনিট বছরে ৬০,০০০ ওয়েফার এবং ৯৬ মিলিয়ন প্যাকেজড ইউনিট উৎপাদন করবে। এই পণ্যগুলি ইলেকট্রিক যানবাহন, রেলওয়ে, দ্রুত চার্জার, ডেটা সেন্টার, সোলার ইনভার্টার, ভোক্তা যন্ত্রপাতি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে ব্যবহৃত হবে।
দ্বিতীয় ইউনিটটি ৩ডি গ্লাস সলিউশনস ইনকর্পোরেটেড স্থাপন করবে, যার বিনিয়োগ ১,৯৪৩ কোটি টাকা। এই ইউনিট বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্যাকেজিং প্রযুক্তি নিয়ে আসবে, যার মধ্যে বছরে ৬৯,৬০০ গ্লাস প্যানেল সাবস্ট্রেট, ৫০ মিলিয়ন অ্যাসেম্বলড ইউনিট এবং ১৩,২০০ ৩ডি হেটেরোজেনিয়াস ইন্টিগ্রেশন (৩ডিএইচআই) মডিউল উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে। এই প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবং অটোমোটিভ ইলেকট্রনিক্সে ব্যবহৃত হবে।
অন্ধ্রপ্রদেশে অ্যাডভান্সড সিস্টেম ইন প্যাকেজ টেকনোলজিস (এএসআইপি) দক্ষিণ কোরিয়ার এপিএসিটি কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতায় ৪৬৮ কোটি টাকার বিনিয়োগে একটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট স্থাপন করবে। এই ইউনিট বছরে ৯৬ মিলিয়ন ইউনিট উৎপাদন করবে, যা মোবাইল ফোন, সেট-টপ বক্স, অটোমোটিভ ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য ভোক্তা পণ্যে ব্যবহৃত হবে।
পাঞ্জাবের মোহালিতে কন্টিনেন্টাল ডিভাইস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড (সিডিআইএল) ১১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগে তাদের বিদ্যমান ডিসক্রিট সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ইউনিটের সম্প্রসারণ করবে। এই ইউনিট বছরে ১৫৮.৩৮ মিলিয়ন উচ্চ-ক্ষমতার ডিভাইস যেমন মসফেট, আইজিবিটি, শটকি বাইপাস ডায়োড এবং ট্রানজিস্টর উৎপাদন করবে। এই পণ্যগুলি ইলেকট্রিক যানবাহন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা, শিল্প অটোমেশন এবং যোগাযোগ অবকাঠামোতে ব্যবহৃত হবে।
এই চারটি নতুন প্রকল্পের সঙ্গে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশনের অধীনে মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট বিনিয়োগ প্রায় ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আগে, ছয়টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল, যার মধ্যে টাটা-পিএসএমসি ফ্যাব, মাইক্রন টেকনোলজি, টাটা, মুরুগাপ্পা গ্রুপের সিজি পাওয়ার, কায়নেস সেমিকন এবং এইচসিএল-ফক্সকনের ইউনিট রয়েছে।
এই প্রকল্পগুলির মধ্যে কিছু ইতিমধ্যে উন্নত নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে, এবং এই বছরের শেষে ভারতে তৈরি প্রথম চিপ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, “সেমিকন্ডাক্টর একটি মৌলিক শিল্প। এটি ছাড়া কোনও দেশ উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পেতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পগুলি ভারতের আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করবে।
এই প্রকল্পগুলি ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং টেলিযোগাযোগ, অটোমোটিভ, ডেটা সেন্টার, ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স এবং শিল্প ইলেকট্রনিক্সের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে। এই ইউনিটগুলি প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রাখবে।
এছাড়া, ২৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৭২টি স্টার্টআপের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ জোরদার হচ্ছে, যার মাধ্যমে ৬০,০০০-এর বেশি শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ লাভ করছে।
আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়: নির্বাচন কমিশনের যুক্তি সঠিক বলল সুপ্রিম কোর্ট
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত ভারতকে বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে নতুন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এই প্রকল্পগুলি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।