সোনার দামে পতন, ট্রাম্পের শুল্ক প্রত্যাহারে স্বস্তি বাজারে

বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে বড় ধরনের সংশোধন দেখা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ঘোষণার পর। ১১ আগস্ট রাতে তিনি জানান, সোনার আমদানিতে কোনো শুল্ক আরোপ…

Invest in Gold Wisely

বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে বড় ধরনের সংশোধন দেখা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ঘোষণার পর। ১১ আগস্ট রাতে তিনি জানান, সোনার আমদানিতে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তার পর এই ঘোষণা আসায় বাজারে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) এক রাতেই ১০ গ্রামে প্রায় ১,৪০০ টাকা দাম কমে যায়। ১২ আগস্টের সকালবেলায় আরও প্রায় ৫০ টাকা হ্রাস পায়, যদিও দিনের লেনদেন তখনও শেষ হয়নি।

এই সিদ্ধান্ত মূলত মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের (CBP) এক সাম্প্রতিক নোটিশকে কার্যত বাতিল করে দিল। ঐ নোটিশে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে ১ কিলোগ্রাম বা ১০০ আউন্স ওজনের স্ট্যান্ডার্ড সোনার বারে সম্ভাব্য শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। প্রস্তাবটি সোনার বৈশ্বিক বাণিজ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল, কারণ এতে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়া এবং দামে তীব্র ওঠানামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

   

আমেরিকা ও বিশ্ববাজারে মূল্য পরিবর্তন:
ট্রাম্পের ঘোষণার পর মার্কিন ডিসেম্বর ডেলিভারির গোল্ড ফিউচার ২.৪ থেকে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়, এবং প্রতি আউন্স ৩,৪০৪ থেকে ৩,৪০৭ মার্কিন ডলারের মধ্যে লেনদেন হয়। স্পট গোল্ডের দাম ১.২ শতাংশ কমে ৩,৩৫৭ থেকে ৩,৩৫৮.৩৩ ডলার প্রতি আউন্সে স্থিত হয়। বৈশ্বিক বেঞ্চমার্ক স্পট গোল্ড ৩,৩৯৪ থেকে ৩,৪০২.৭০ ডলারের মধ্যে অবস্থান করে। উল্লেখযোগ্য বিষয়, মাত্র কয়েক দিন আগেই, ৮ আগস্ট, মার্কিন গোল্ড ফিউচার ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩,৫৩৪ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছিল।

সুইজারল্যান্ডের জন্য বড় স্বস্তি:
এই সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিয়েছে সুইজারল্যান্ডকে—বিশ্বের প্রধান সোনা পরিশোধন ও রপ্তানিকারক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে সুইস সোনা রপ্তানিতে ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বুলিয়ন সরবরাহ পথকে বিপদের মুখে ফেলেছিল। শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে সে ঝুঁকি কেটে গেছে এবং পরিশোধন শিল্পে স্থিতিশীলতা ফিরেছে।

নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার আকর্ষণ অটুট
দাম কমলেও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা অটুট রয়েছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিত বাণিজ্যনীতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বজায় রেখেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক নিয়ে ভীতি কেটে যাওয়ায় স্বল্পমেয়াদে জল্পনামূলক দামের উল্লম্ফন কিছুটা কমতে পারে।

Advertisements

দীর্ঘমেয়াদি বাজারচিত্র:
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদা ১ শতাংশ বেড়ে ১,২০৬ টনে দাঁড়িয়েছে—যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ ত্রৈমাসিক ভোগ। ডয়চে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকের পূর্বাভাস, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান ক্রয় এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আগামী মাসগুলোতেও সোনার দাম শক্তিশালী থাকবে। যদিও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে বাজারকে স্থিতিশীল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে দাম ইতিহাসের তুলনায় উচ্চ পর্যায়ে থেকে যেতে পারে।

ভারতে সোনা বিনিয়োগে ইটিএফ-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি:
ভারতে সোনার দামের এই ওঠানামার মধ্যে শারীরিক সোনা না কিনে বিনিয়োগের জন্য গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনযোগ্য এই ফান্ডগুলো সোনার বাজারমূল্যের সঙ্গে সরাসরি ওঠানামা করে, ফলে সংরক্ষণ বা বিশুদ্ধতা নিয়ে ঝুঁকি থাকে না। এছাড়া, সহজে কেনা-বেচা করার সুবিধা থাকায় তরল বিনিয়োগ হিসেবে ETF আকর্ষণীয়। যদিও এগুলোতে ব্রোকারেজ ফি এবং বাজারের ওঠানামার প্রভাব থাকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রচলিত গয়না কেনার চেয়ে ETF অনেক বেশি স্বচ্ছ ও নিরাপদ বিনিয়োগপথ।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভাব
বিশ্ববাজারে সোনার এই পতনের প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারতের খুচরা বাজারেও পড়তে পারে। ভারত, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা ভোক্তা দেশ হিসেবে, বৈশ্বিক দামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। দাম কমলে উৎসবের মৌসুমে চাহিদা আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশেও বিয়ে মৌসুমে স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা বাড়ায় বৈশ্বিক বাজারের পরিবর্তন স্থানীয় বাজারে দ্রুত প্রতিফলিত হয়।

বাজার পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য:
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে স্বল্পমেয়াদে দামে পতন হলেও, বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয় প্রবণতার দিকে। যদি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকে, সোনা এখনও দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক বিনিয়োগ হতে পারে।