সরকার- আইপ্যাক জোটের তদন্তের দাবিতে অশ্বিনীকে চিঠি শুভেন্দুর

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu) রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং ভারতীয় পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি (আইপ্যাক)-এর মধ্যে অবৈধ জোটের তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি…

Suvendu alleges I pac

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu) রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং ভারতীয় পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি (আইপ্যাক)-এর মধ্যে অবৈধ জোটের তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠি লিখেছেন। গত ৮ আগস্ট, ২০২৫-এ তাঁর এক্স পোস্টে তিনি এই গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

যেখানে বলা হয়েছে যে আইপ্যাকের সহযোগীরা, যারা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কাজ করা একটি বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অনুপ্রবেশ করেছে। এই ঘটনাকে তিনি রাজনৈতিক দল এবং জনসেবার মধ্যে সীমারেখা মুছে ফেলার একটি বিপজ্জনক প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

   

শুভেন্দু অধিকারী তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে, আইপ্যাকের কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক কাঠামোতে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। তিনি দাবি করেছেন, এই বেসরকারি সংস্থার সহযোগীরা সিনিয়র আধিকারিকদের, যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) নির্বাহী আধিকারিক এবং পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস আধিকারিকদের নির্দেশ দিচ্ছে।

এই কার্যকলাপ রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, “এটি কেবল ক্ষমতার অপব্যবহার নয়, বরং রাজ্যের অর্থভাণ্ডার থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণা ব্যবস্থাপনা সংস্থা আইপ্যাকের জন্য অর্থ ব্যয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। এটি একটি আর্থিক কেলেঙ্কারি হতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি নাগরিকের আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”

শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (এনআইসি)-এর মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা তার চিঠিতে কয়েকটি প্রমান নথিভুক্ত করেছেন যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আইপ্যাকের অননুমোদিত সম্পৃক্ততার ডিজিটাল প্রমাণ।

বেসরকারি সংস্থা দ্বারা রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পদের অপব্যবহার, তথ্য গোপনীয়তা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়মের লঙ্ঘন। জনসাধারণের তহবিল থেকে আইপ্যাকের কাছে অবৈধ অর্থপ্রদানের সম্ভাবনা। তিনি বলেন, “এটি শুধু একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। আমি এই পদ্ধতিগত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

আইপ্যাক একটি রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থা হিসেবে পরিচিত, যা তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, আইপ্যাকের কর্মীরা “পাড়ায় পাড়ায় সমাধান” নামে রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পে জড়িত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি দাবি করেছেন, এই কার্যক্রমে সরকারের অনুমোদন রয়েছে, যা প্রশাসনিক নিরপেক্ষতার লঙ্ঘন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি ডব্লিউবিসিএস আধিকারিকদের সতর্ক করে বলেছেন, “আইপ্যাকের নির্দেশ মানা বন্ধ করুন, এটি আইনের লঙ্ঘন।”

Advertisements

এই অভিযোগ রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূল সমর্থকরা শুভেন্দুর অভিযোগকে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা এই তদন্তের দাবিকে সমর্থন করে বলছেন, “এটি তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির আরেকটি প্রমাণ।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং গণতন্ত্রের উপর নতুন প্রশ্ন তুলবে।

শুভেন্দু অধিকারীর এক্স পোস্টে তিনি এই ঘটনাকে “পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের পবিত্র করিডোরে আইপ্যাকের অনুপ্রবেশ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব আইপ্যাকের হাতে তুলে দিয়েছেন।”

সামাজিক মাধ্যমে এই অভিযোগ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “আইপ্যাকের কর্ণধাররা ভোটার তালিকা প্রভাবিত করছে, এবং মমতা তাদের সরকারি সুবিধা দিচ্ছেন।” আরেকটি পোস্টে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আইপ্যাককে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।

পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ মহুয়া, সাগরিকার অভিযোগ: “শাড়ি ধরে টেনেছে”

শুভেন্দু অধিকারীর এই চিঠি পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আইপ্যাকের সম্পর্ক নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তের দাবি কেন্দ্রীয় সরকার এবং ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারের পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়ে জনমনে সচেতনতা বাড়াতে পারে।