এক সময়ের ‘লাল দুর্গ’ হিসেবে খ্যাত পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে (Keshpur) আবারও লাল ঝান্ডার ঝড় তুলতে প্রস্তুত সিপিআইএম। ২০১১ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কেশপুরে বামেদের প্রভাব অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই অঞ্চলে নিজেদের গড় পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে দলটি। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১০ আগস্ট কেশপুরে শহীদ দিবস (Shahid Divas in Keshpur)পালন করল সিপিআইএম। এই দিনে কমরেড জামসেদ আলি-সহ ৭৭ জন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।
১৯৮৩ সালের ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের গুণ্ডাবাহিনীর হাতে কেশপুরের দলীয় কার্যালয়ে নৃশংসভাবে খুন হন কমরেড জামসেদ আলি। তিনি তখন মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। এরপর থেকে কেশপুরে রাজনৈতিক হিংসার শিকার হন আরও ৭৬ জন সিপিআইএম কর্মী ও সমর্থক। এই শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর কেশপুরে শহীদ দিবস পালন করে আসছে দলটি। এবারের অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করেন বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা ডহর সেন। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, জেলা সম্পাদক বিজয় পাল, রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা, পার্টি নেতা প্রানকৃষ্ণ মণ্ডল এবং আব্বাস আলি। শহীদ মঞ্চে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে দলের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার ও বার্তা তুলে দেওয়া হয়। নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আগামী দিনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ২০২৬-এর ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। জেলা সম্পাদক বিজয় পাল বলেন, “কেশপুরের মানুষের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের সংগ্রামের প্রেরণা। আমরা এই মাটিতে আবারও শক্তি সঞ্চয় করব।”

কেশপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের স্মৃতি এখনও তাজা। সেই সময় এই এলাকা ছিল সিপিআইএম-এর শক্ত ঘাঁটি। তবে, তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের পর এই অঞ্চলে বামেদের প্রভাব কমে যায়। সম্প্রতি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে সিপিআইএম আবারও সংগঠন শক্তিশালী করার চেষ্টায় রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে কেশপুরে সিপিআইএম-এর এরিয়া কমিটির সম্মেলন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়া এই প্রচেষ্টারই একটি প্রমাণ।
এই শহীদ দিবসের মাধ্যমে সিপিআইএম শুধু অতীতের সংগ্রামকে স্মরণ করেনি, বরং আগামী দিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্যও নিজেদের প্রস্তুত করছে। নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে সমান তীব্রতায় লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনগণের উপস্থিতিও সিপিআইএম-এর পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে। আগামী নির্বাচনে কেশপুর কি আবারও ‘লাল দুর্গ’ হিসেবে ফিরে আসবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।