সুপ্রিম কোর্টকে জবাবদিহি নয়! স্পষ্ট করল নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন (ECI) সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) একটি সাম্প্রতিক নির্দেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে যে, তারা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভোটারদের পৃথক তালিকা…

Supreme Court and election commission clash

নির্বাচন কমিশন (ECI) সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) একটি সাম্প্রতিক নির্দেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে যে, তারা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভোটারদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে বা এর জন্য কারণ দিতে বাধ্য নয়। এই নির্দেশটি অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)-এর একটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন এই হস্তক্ষেপকে ‘অতি-তদারকি’ হিসেবে সমালোচনা করে বলেছে, ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়া কমিশনের দায়িত্ব, আদালতের নয়।নির্বাচন কমিশন একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, আমরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভোটারদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে বা এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বাধ্য নই।”

   

কমিশন আরও উল্লেখ করেছে যে, রাজনৈতিক দলগুলিকে ইতিমধ্যেই বুথ-স্তরে এমন ভোটারদের তালিকা দেওয়া হয়েছে, যাদের ফর্ম জমা পড়েনি বা যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতির মাধ্যমে কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে বাধ্য নয় এবং তাদের কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া পোস্ট অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থানকে অনেকে সমর্থন করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “মাননীয় বিচারপতিদের অতি-তদারকি বন্ধ করা উচিত এবং নির্বাচন কমিশনকে তাদের কাজ করতে দেওয়া উচিত। ভারতের নির্বাচন আদালতের গ্যালারি দ্বারা নয়, নির্বাচন কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।”

এই মন্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে অনেকে নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সওয়াল করেছেন।এডিআর-এর পিটিশনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভোটারদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং এর পিছনে কারণ উল্লেখ করতে হবে।

এডিআর-এর দাবি ছিল, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, যা নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে, নির্বাচন কমিশন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, তাদের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য ইতিমধ্যেই শেয়ার করা হয়েছে।

Advertisements

নির্বাচন কমিশনের মতে, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়ার অধীনে পরিচালিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ফর্ম ৬, ৭ এবং ৮-এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়, এবং বুথ-স্তরীয় কর্মকর্তারা (বিএলও) এই তথ্য সংগ্রহ করেন। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলিকে বুথ-স্তরে এই তথ্য দেওয়া হয়, যাতে তারা প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তাই, পৃথক তালিকা প্রকাশের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

এই ঘটনা নির্বাচন কমিশন এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান তার স্বায়ত্তশাসন এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার উপর জোর দেওয়ার প্রচেষ্টা। ভারতের সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্বাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

তবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এই ক্ষমতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই বিষয়ে এক্স-এ মন্তব্য করে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা উচিত।” অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বলেন, “কমিশন তার কাজে দক্ষ এবং স্বাধীন।

বেঙ্গালুরু উপেক্ষিত ! বন্দে ভারত উদ্বোধনে মোদীকে বলতে চান শিবকুমার

আদালতের অযাচিত হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।”এই বিতর্ক ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং স্বাধীনতার প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে এই বিষয়ে আরও আলোচনা এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের দিকে সবার নজর থাকবে।