কলকাতা: বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে (Private Hospital) অতিরিক্ত বিল আদায়ের প্রবণতা রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। গত জুন মাসে বিধানসভা অধিবেশনে পেশ হওয়া ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট (রেগুলেশন) সংশোধনী বিল ইতিমধ্যেই পাশ হয়েছে। সংশোধনীটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে রোগী ও তাঁর পরিবারের উপর অযাচিত আর্থিক চাপ কমানোই এর মূল লক্ষ্য।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সংশোধনী আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে চিকিৎসার জন্য যে প্যাকেজের কথা জানাবে, চিকিৎসা সেই নির্দিষ্ট প্যাকেজের মধ্যেই রাখতে হবে। যদি চিকিৎসার খরচ ওই প্যাকেজের বাইরে চলে যায়, তবে হাসপাতালকে লিখিতভাবে রোগীর পরিবারকে জানাতে হবে এবং তাঁদের লিখিত সম্মতি নিতে হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খরচের একটি বিস্তারিত বিল ও যুক্তিসহ ব্যাখ্যাও দিতে হবে।
নতুন আইন কার্যকর হলে রাজ্যের সমস্ত নথিভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর আওতায় আসবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ছোটখাটো অপারেশন বা নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ বহুবার এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে মূল রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন আনুষঙ্গিক চিকিৎসার খরচ প্যাকেজে জুড়ে দেওয়া হয়, অথচ রোগীর পরিবারকে সময়মতো কিছু জানানো হয় না।” ফলত, হাসপাতাল ছাড়ার সময় বিশাল অঙ্কের বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও, অপ্রয়োজনে রোগীকে দীর্ঘ সময় আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখার অভিযোগও বহুবার উঠে এসেছে। এতে শুধু খরচই নয়, মানসিক চাপও বাড়ে। রাজ্য সরকারের দাবি, নতুন আইন কার্যকর হলে এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং রোগীর অধিকার রক্ষিত হবে।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চিকিৎসার সময় অনেক সময় নতুন সমস্যা ধরা পড়তে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত পরীক্ষা বা চিকিৎসা করা প্রয়োজন হয়। এতে খরচ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে সরকারের বার্তা একটাই—রোগীর পরিবারের সম্মতি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না।
আইন কার্যকর হওয়ার পর সম্ভাব্য প্রভাব হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
রোগীর পরিবার চিকিৎসার আগে খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
অতিরিক্ত খরচ হলে তার যৌক্তিক কারণ জানতে পারবেন।
হাসপাতালগুলিকে প্যাকেজভিত্তিক চিকিৎসায় আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা বিলের অঙ্ক বাড়ানোর প্রবণতা অনেকটাই কমবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে, এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে এবং চিকিৎসার নামে আর্থিক শোষণ অনেকাংশে রোধ হবে। বিল কার্যকর হলে চিকিৎসা পরিষেবায় প্যাকেজভিত্তিক স্বচ্ছতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই রোগীর অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
এখন রাজ্যের সব নজর এই আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়ার দিকে। স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলিকে নির্দেশিকা প্রস্তুত করতে শুরু করেছে, যাতে আইন কার্যকর হতেই তা বাস্তবায়ন করা যায়। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এই আইন সত্যিই কার্যকর হলে আর কেউ যেন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় অপ্রত্যাশিত বিশাল বিলের ধাক্কা না খান।