আই-প্যাক বিতর্কে সরকারি আধিকারিকদের মর্যাদা নিয়ে সরব শুভেন্দু

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu)একটি বিস্ফোরক অভিযোগ। তিনি দাবি করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি…

Suvendu slams mamata govt

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu)একটি বিস্ফোরক অভিযোগ। তিনি দাবি করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা আই-প্যাক (I-PAC)-এর হাতে তুলে দিয়েছেন।

শুভেন্দু অধিকারী, যিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে এই অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এই ঘটনাকে “অনৈতিক” ও “অবৈধ” আখ্যা দিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই অভিযোগ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।

   

শুভেন্দুর অভিযোগের বিস্তারিত

শুভেন্দু অধিকারী তাঁর পোস্টে দাবি করেছেন যে, আই-প্যাক নামক একটি কর্পোরেট সংস্থা, যা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রচার ও সাংগঠনিক কৌশল তৈরিতে কাজ করে, তাকে রাজ্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে জড়িত করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই সংস্থার সাধারণ কর্মচারীরা প্রশাসনিক পদে নিয়োজিত নয়, তবুও তারা WBCS (এক্সিকিউটিভ) এবং IAS অফিসারদের নির্দেশ দিচ্ছেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি পদে কর্মরত একজন WBCS অফিসারকে আই-প্যাকের একজন সাধারণ কর্মচারী নির্দেশ দিচ্ছেন, যা তিনি “অভূতপূর্ণ” বলে বর্ণনা করেছেন।

শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন, এই ধরনের কার্যক্রম কতটা বৈধ এবং এর জন্য রাজ্য সরকার কত টাকা এই বেসরকারি সংস্থাকে প্রদান করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই ব্যবস্থার পেছনে একটি “সুপরিকল্পিত আর্থিক কেলেঙ্কারি” লুকিয়ে রয়েছে।

প্রশাসনিক সংগঠনগুলির নীরবতা

শুভেন্দু অধিকারী WBCS (এক্সিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং IAS অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা প্রসঙ্গে তাদের কোনও বক্তব্য আছে কি না। তিনি জানতে চেয়েছেন, কেন প্রশাসনিক সংগঠনগুলি এই বিষয়ে নীরব রয়েছে ।

কেন তারা আই-প্যাকের মতো একটি বেসরকারি সংস্থার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করছে না। তিনি মনে করেন, রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় “পচন” ধরে গেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় স্বার্থে কাজ করছে।

আই-প্যাক কী?

আই-প্যাক (ইন্ডিয়ান পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি) একটি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচার কৌশল তৈরি এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এই সংস্থার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।

Advertisements

তবে, শুভেন্দুর অভিযোগ, আই-প্যাক এখন শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, রাজ্যের প্রশাসনিক কাজেও জড়িত হয়েছে, যা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়। তিনি দাবি করেছেন, এই সংস্থার কর্মচারীরা “পাড়ায় পাড়ায় সমাধান” নামক একটি সরকারি প্রকল্পে তথ্য সংগ্রহ এবং জনগণকে প্রভাবিত করার কাজ করছে।

তৃণমূল শূন্য বোর্ড! কোন্নগরে ৫৩-০ ব্যবধানে সিপিএমের পরিচালন সমিতি

আইনি ও আর্থিক প্রশ্ন

শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, আই-প্যাকের এই “পরিষেবা”র জন্য রাজ্য সরকার কত টাকা ব্যয় করছে এবং এই অর্থ কি রাজ্যের কোষাগার থেকে প্রদান করা হচ্ছে। তিনি এটিকে একটি সম্ভাব্য আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে উল্লেখ করে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই অনৈতিক আঁতাতকে ভেঙে ফেলতে না পারলে রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সচেতন হতে এবং সরকারের কার্যক্রমের উপর নজর রাখতে।

শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সাংবিধানিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আই-প্যাকের মতো একটি বেসরকারি সংস্থার প্রশাসনিক কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি যদি সত্য হয়, তবে এটি রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের কী জবাব দেয় এবং শুভেন্দু কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেন, তা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে প্রভাবিত করবে। এই ঘটনা রাজ্যের জনগণের মধ্যেও সরকারের প্রতি আস্থার প্রশ্ন তুলেছে।