নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে কর্নাটকে ভোটচুরির অভিযোগ ‘পাপ্পুর’

কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কর্নাটকের (Karnataka) নির্বাচন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকের ফলাফল…

Karnataka alleges election commission of India

কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কর্নাটকের (Karnataka) নির্বাচন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকের ফলাফল নিয়ে বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে। রাহুল গান্ধীর মতে, তাঁদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে কংগ্রেস ১৫-১৬টি আসনে এগিয়ে ছিল, কিন্তু ফলাফলে তারা মাত্র ৯টি আসনে জয়লাভ করেছে।

এই ফলাফলের পর তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কি সত্যিই এই আসনগুলো হেরেছিলাম?” নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা এবং সিসিটিভি ফুটেজের জন্য সাহায্য চাওয়া হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। উপরন্তু, নির্বাচন কমিশন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের নিয়মই পরিবর্তন করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই ঘটনা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

   

কর্নাটক নির্বাচনে অভিযোগ

রাহুল গান্ধী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমাদের জরিপে দেখা গিয়েছিল যে কর্নাটকে আমরা ১৫-১৬টি আসনে এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, আমরা মাত্র ৯টি আসনে জিতেছি। এরপর আমরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করলাম, আমরা কি সত্যিই এই আসনগুলো হেরেছিলাম?”

তিনি আরও দাবি করেন, কর্নাটকের মহাদেবপুরা নির্বাচনী এলাকায় ১ লাখের বেশি ভুয়ো ভোটার, ১১,০০০-এর বেশি ডুপ্লিকেট ভোটার, ৪০,০০০ ভুয়ো ঠিকানা এবং ফর্ম ৬-এর ৩৩,০০০-এর বেশি অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন মহিলা, শকুন রানি, দুবার ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে ভোট দিয়েছেন, যা নির্বাচনী কারচুপির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন যে নির্বাচন কমিশন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে মিলে এই কারচুপি করেছে। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা এবং সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কোনও সাহায্য করেনি। উল্টে তারা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের নিয়ম পরিবর্তন করে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ১০-১৫ বছরের মেশিন-পাঠযোগ্য ভোটার তালিকা এবং সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ না করলে, তারা এই ‘অপরাধে’ অংশ নিচ্ছে। রাহুল গান্ধী এই কারচুপিকে ভারতীয় সংবিধান এবং জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “এই কারচুপি যদি সত্য হয়, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র আর অস্তিত্বে নেই। বিচারব্যবস্থার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত।”

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, ভোটের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা ভোটারদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তারা জানিয়েছে, ফুটেজ প্রকাশ করলে কে ভোট দিয়েছেন এবং কে দেননি, তা প্রকাশ্যে চলে আসবে, যা ভোটারদের হয়রানি বা ভয় দেখানোর কারণ হতে পারে।

Advertisements

কমিশন আরও বলেছে, ফুটেজ শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি আইনি বাধ্যবাধকতা নয়। তারা জানিয়েছে, ফলাফল ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে ফুটেজ ধ্বংস করা হয়, যা নির্বাচনী পিটিশন দাখিলের সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, যদি কোনও নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করা হয়, তাহলে ফুটেজ ধ্বংস করা হয় না এবং আদালতের নির্দেশে তা প্রদান করা হয়।

নিয়ম পরিবর্তনের বিতর্ক

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে ‘কন্ডাক্ট অফ ইলেকশন রুলস, ১৯৬১’-এর ৯৩ নম্বর নিয়ম সংশোধন করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ এবং ওয়েবকাস্টিং ভিডিওর মতো ইলেকট্রনিক রেকর্ডের পাবলিক অ্যাক্সেস সীমিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, এই সংশোধনী ভোটারদের গোপনীয়তা রক্ষা এবং ভুয়ো প্রচার রোধ করার জন্য করা হয়েছে।

তবে, রাহুল গান্ধী এই সংশোধনীকে ‘প্রমাণ লোপাটের’ প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “ভোটার তালিকা? মেশিন-পাঠযোগ্য ফরম্যাটে দেবে না। সিসিটিভি ফুটেজ? আইন পরিবর্তন করে লুকিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনের ছবি ও ভিডিও? এখন ৪৫ দিনের মধ্যে মুছে ফেলা হবে, এক বছর নয়।”

চোট সমস্যার জের! ডায়মন্ড হারবার ম্যাচে নেই বাগানের এই ফুটবলার

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

কর্নাটকের এই অভিযোগ ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই নিয়ম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন, যাতে সিসিটিভি ফুটেজের পাবলিক প্রকাশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, ভোটার সংখ্যা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলাকালীন সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলা যাবে না।

রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কর্নাটকের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে এই বিতর্ক কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে তাই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আগামী দিনে এই ইস্যুতে বিচারব্যবস্থার ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।