নজির গড়ল সুপ্রিম কোর্ট, নিজস্ব আদেশ বাতিল করল

ভারতের বিচারব্যবস্থায় এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নিজেরই একটি নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিল। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের স্থলাভিষিক্ত…

Supreme Court Sets Precedent by Revoking Its Own Order

ভারতের বিচারব্যবস্থায় এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নিজেরই একটি নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিল। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের স্থলাভিষিক্ত বর্তমান প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের অনুরোধেই ৪ অগস্টের নির্দেশ বাতিল করে এই সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফলে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য এবং বিচারপতিদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দুই বিচারপতি — বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের একটি আদেশ ঘিরে। ওই নির্দেশে তাঁরা এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রশান্ত কুমারকে ফৌজদারি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী, বিচারপতি প্রশান্ত কুমার অবশিষ্ট চাকরির মেয়াদকাল পর্যন্ত আর কোনও ফৌজদারি মামলার শুনানি কিংবা রায়দান করতে পারবেন না।

   

এই নির্দেশ জারি হওয়ার পরেই আইনমহলে বিস্ময়ের সঞ্চার হয়। প্রশ্ন ওঠে, কী কারণে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) কোনও হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতিকে এমনভাবে কার্যত দায়িত্বচ্যুত করল? যদিও সেই নির্দেশে সুস্পষ্টভাবে কারণ উল্লেখ ছিল না, ফলে জল্পনা আরও বাড়ে। অনেকে মনে করেন, কোনও নির্দিষ্ট মামলায় অসন্তোষ থেকেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত এসেছিল।

তবে সবকিছুর পর চমক আসে ৮ অগস্টে, যখন সুপ্রিম কোর্ট নিজেদের ৪ অগস্টের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এই প্রত্যাহারের পেছনে মূল ভূমিকা নেন দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। তাঁর অনুরোধে বিচারপতি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মহাদেবন তাঁদের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। বলা হয়, “বিচারপতি গাভাইয়ের অনুরোধ ও সুপারিশকে সম্মান জানিয়ে আমরা নির্দেশ প্রত্যাহার করছি।”

এই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন একাধিক প্রাক্তন বিচারপতি ও আইনজীবী। তাঁদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট নিজে যে রায় দেয়, তা থেকে এভাবে ইউ-টার্ন নেওয়া অত্যন্ত বিরল। এমনকি, কোনও হাইকোর্টের বিচারপতির বিচারক্ষমতায় এভাবে হস্তক্ষেপ করাও আইনি শিষ্টাচারের প্রশ্ন তোলে।

Advertisements

এক প্রবীণ আইনজীবীর মতে, “বিচারপতিদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা চলে। সেখানে কোনও বিচারপতিকে ফৌজদারি মামলার বিচার থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার অর্থ কার্যত তাঁর দায়িত্ব খর্ব করা। আর পরে সেই আদেশ আবার প্রত্যাহার, এটি বিচারব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের দৃষ্টান্ত।”

তবে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই সংশোধনী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, ভুল হলে তা সংশোধন করাও বড়ত্বের লক্ষণ। প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য মিটে গেছে, এবং বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখা গিয়েছে, এটাই বড় কথা।

বিচারপতি প্রশান্ত কুমার এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

সব মিলিয়ে, সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই ঘটনা বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী অধ্যায় হয়ে রইল — যেখানে সর্বোচ্চ আদালত নিজের রায়েই সংশোধন এনে নজির স্থাপন করল। এখন দেখার, ভবিষ্যতে এর প্রভাব কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।