‘দেব মহামানব, ওর নীতি আলাদা’, ঘাটালে শুভেন্দু-দেব তরজা নিয়ে মুখ খুললেন কুণাল ঘোষ

ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক জলঘোলা তুঙ্গে। সেই আবহেই ঘাটালের সাংসদ তথা তারকা অভিনেতা দেবকে ‘প্রতারক’ বলে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর…

'দেব মহামানব, ওর নীতি আলাদা', ঘাটালে শুভেন্দু-দেব তরজা নিয়ে মুখ খুললেন কুণাল ঘোষ

ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক জলঘোলা তুঙ্গে। সেই আবহেই ঘাটালের সাংসদ তথা তারকা অভিনেতা দেবকে ‘প্রতারক’ বলে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে যখন তৃণমূলের একাংশ থেকে প্রতিক্রিয়া আশা করা হচ্ছিল, তখন দলীয় মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এক ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিলেন— এবং দেবের নীরবতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বললেন, ‘‘দেব মহামানব। ওর নীতি ভিন্ন।’’

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটালের প্লাবন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান। ঘাটালবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’-এর অগ্রগতির কথাও জানান। আর তার ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, ঘাটাল পরিদর্শনে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকেই তিনি দেবকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘দেব প্রতারক।’’

   

এই বিষয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খুললেন কুণাল ঘোষ। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দেবকে শুভেন্দু অপমান করে থাকলে, তার জবাব দেব দিতে পারে। আমি দেব না। দেব তো মহামানব শিশু। ওর নীতি – ‘মেরেছো কলসির কানা/তাই বলে কি প্রেম দেব না?’’

কুণাল ঘোষ আরও বলেন, ‘‘কেউ যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন, ধরুন মিঠুন চক্রবর্তী, তাহলে কি দেব কোনওদিন তার জবাবে কিছু বলেছে? বলেনি। কারণ ওর দর্শন ভিন্ন। ও চায়, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে। তাই ও কাউকে আক্রমণ করে না। এমনকি বিজেপির হেভিওয়েট নেতা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করলেও সে নিরুত্তর থাকে।’’

দলের একাংশ যেখানে শুভেন্দুর মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ চেয়েছিল, সেখানে কুণালের এই বক্তব্য অনেকটাই ভিন্ন সুর তৈরি করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি যদি দেবের হয়ে শুভেন্দুকে কিছু বলি, তাহলে সেটা দেবের বিশ্বাস ও নীতির বিরোধিতা হবে। আমরা দেবের মতাদর্শকেই সম্মান জানাচ্ছি। ওর একটা নিজস্ব দর্শন রয়েছে, এবং আমরা তার মর্যাদা রাখছি।’’

Advertisements

দেবের এই নীরবতা এবং বিরোধীদের প্রতি কটাক্ষ না করার দৃষ্টিভঙ্গিকে তৃণমূল নেতাদের একাংশ প্রশংসাযোগ্য বলেই মনে করছেন। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা তৃণমূলের কৌশলগত অবস্থানও হতে পারে— যেখানে একদিকে শুভেন্দুর অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, অন্যদিকে দেবের ‘গুড বয় ইমেজ’-কে ব্যবহার করে জনমানসে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘দেব যদি সত্যিই এত নিরপেক্ষ হন, তাহলে তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান না কেন? মানুষ তো ভোট দিয়েছে তাঁকে। শুধু চুপ থেকে দায়িত্ব এড়ানো যায় না।’’

এই মুহূর্তে ঘাটাল প্লাবিত, মানুষ ভোগান্তিতে। তার মধ্যেই রাজনৈতিক তরজা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। তবে কুণাল ঘোষের মন্তব্যে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন দেব— এক তারকা সাংসদ যিনি রাজনীতির কাদামাটিতে না নেমে ‘প্রেম’ ও ‘নৈতিকতা’কে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন।