ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গ সফরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) কার্যত বার্তা দিলেন— “চোখে চোখে রাখা হচ্ছে সবাইকে।” ক্যামাক স্ট্রিটে পরপর বৈঠক করে অভিষেক বুঝিয়ে দিলেন, কোনও রকম গোষ্ঠীকোন্দল কিংবা জনসংযোগে খামতি মেনে নেওয়া হবে না।
বুধবার মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগের দিন, মঙ্গলবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এই বৈঠকগুলোর মূল লক্ষ্য— উত্তরবঙ্গের সংগঠনকে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানো এবং নেতাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানো।
মালদহ তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “কে কোথায় কী করছেন, সব নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। গণ্ডগোল করলে কেউ রেহাই পাবেন না। মানিকচকে যারা দলবিরোধী কাজ করেছেন, তাঁদের সাসপেন্ড করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” কর্মসূচিকে আরও মজবুত করতে হবে। প্রতিটি নেতা-কর্মীকে মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। সমাজের সবস্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করতে হবে। জনসংযোগ বাড়ানোই ২০২৬ নির্বাচনে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
বৈঠকে রাজ্যের এনআরসি ইস্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তৃণমূলের এই নেতা। অভিষেক বলেন, “এনআরসি নিয়ে বিজেপি ভয় দেখাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেককে এলাকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এই ভয়ের আবরণ সরিয়ে দিতে হবে।”
এছাড়াও উত্তরবঙ্গে দলের ভাঙন ঠেকাতে এবং ক্ষমতা ধরে রাখতে চারটি বর্তমান আসন ধরে রাখার পাশাপাশি বাকি তিনটি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেন তিনি। প্রতিটি ব্লকে সংগঠন ঢেলে সাজানোর বার্তাও দেন অভিষেক। বলেন, “ব্লকস্তরে রদবদল হবে। তবে সেই তালিকা তৈরি করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে।”
এই বৈঠকে তিনি নেতাদের নির্দেশ দেন— “বিতর্কিত মন্তব্য করবেন না। অন্তর্কলহে আমরা ফল ভুগেছি। এবার দলবিরোধী আচরণ মেনে নেওয়া হবে না।”
বাংলা ভাষার অপমান এবং বাঙালি পরিচয়ের উপর হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কোনও অপমান সহ্য করা হবে না। আমাদের এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। প্রতিটি নেতা-কর্মীকে এই বিষয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
২০২৬-এর লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ যে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘কড়া মনোভাব’ স্পষ্ট করে দিল— দল চলবে শৃঙ্খলার পথে, নয়তো রদবদল নিশ্চিত।