তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ফের দলকে কড়া বার্তা দিলেন—বুথ স্তরের সংগঠনে আর গাফিলতি চলবে না। মঙ্গলবার তৃণমূলের এক ভার্চুয়াল সাংগঠনিক বৈঠকে প্রায় ন’হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেন, ২০২১-এর বিধানসভা এবং ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে যেসব বুথে বিজেপি একশোর বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল, সেসব বুথের সভাপতি এবং বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA)–কে অবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে।
রাজ্যে মোট বুথের সংখ্যা ৮০ হাজারেরও বেশি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার বুথে বিজেপি কিছু না কিছু লিড পেয়েছে। যদিও একশোর বেশি ভোটে লিডের সংখ্যা অনেকটাই কম। কিন্তু এই সামান্য ব্যবধানটুকু থেকেও যেন সুযোগ না নেয় গেরুয়া শিবির, সেই লক্ষ্যেই আরও শক্তিশালী সংগঠন গড়তে চায় তৃণমূল। তাই একরকম আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল শাসকদল৷
ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক দলের কাছে স্পষ্ট করেন, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ‘রেকর্ড ফল’ করতে হলে এখন থেকেই প্রত্যেকটি দুর্বল বুথকে চিহ্নিত করে সেগুলিতে সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে। এক ঘণ্টা দশ মিনিটের বৈঠকে তিনি দলীয় কর্মীদের কাছে রূপরেখা তুলে ধরেন—কীভাবে নির্বাচনের আগে সংগঠনকে মজবুত করা যায়, কীভাবে জনমুখী কর্মসূচি সফল করা যায় এবং কীভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করা যায়।
এই প্রেক্ষিতে অভিষেকের জোর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভোটার তালিকা সংশোধনের উপর নজরদারি। চলতি মাসেই রাজ্যে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের নিয়োগকৃত বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিষেক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই BLO-দের মধ্যে অনেকেই সিপিএম মনোভাবাপন্ন এবং পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করতে পারেন৷
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব জনমুখী পরিষেবা দিচ্ছেন, তা পেতে হলে নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় থাকা অত্যাবশ্যক। বিজেপি বলেছে, তারা এক কোটি নাম বাদ দেবে। যদি একজনের নামও বাদ যায়, আমরা তা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেব।” BLO-দের কার্যকলাপের উপর কঠোর নজরদারি রাখতে বলেন তিনি। এমনকি, কোনো BLO পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শও দেন।
তৃণমূলের একাধিক নেতার মতে, অভিষেকের এই বার্তা শুধু একটি রুটিন সাংগঠনিক বৈঠকের অংশ নয়, বরং আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির রণকৌশল। কারণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বহু সময়েই দেখা গেছে, বুথ স্তরের সংগঠনের উপরই নির্ভর করে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ, ইভিএম পরিচালনার সঠিকতা, এমনকি ভোটারদের উৎসাহিত করার কাজ—সব কিছুতেই বুথ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷
অভিষেকের কড়া বার্তা, “দুর্বল বুথ মানে ঝুঁকি। আর ঝুঁকি মানে হারার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে জিতের সুযোগে রূপান্তর করতে হলে এখনই সংগঠনকে মজবুত করতে হবে।” তৃণমূল নেতৃত্ব এখন বুঝে গিয়েছে, রাজনীতির ময়দানে প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, মাটির স্তরে সংগঠন মজবুত থাকলে জয়ের রাস্তা তৈরি হয়। আর তাই ২০২৫-এ দল যে কোনও খামতি রাখতে চায় না৷
এই বৈঠকের পর রাজ্য জুড়ে বুথ ভিত্তিক রদবদলের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রে। জেলা এবং ব্লক স্তরের নেতৃত্বের কাছেও পাঠানো হয়েছে বিস্তারিত নির্দেশিকা। অভিষেকের স্পষ্ট বক্তব্য—“এই লড়াই শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, এই লড়াই সংগঠনের আত্মবিশ্বাস ফেরানোরও।”