ভারতের প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর (Anurag Thakur) আবারও বক্সিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (বিএফআই) সভাপতি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। তাঁর গোষ্ঠী সোমবার দাবি করেছে যে তারা অন্তর্বর্তী কমিটির করা সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। হিমাচল প্রদেশ বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিবিএ) আসন্ন ২১ আগস্টের নির্বাচনের জন্য অনুরাগ ঠাকুর এবং এইচপিবিএ-র সভাপতি রাজেশ ভাণ্ডারীকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছে। এর আগে, গত ২৮ মার্চের নির্বাচনের জন্যও ঠাকুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন বিএফআই সভাপতি অজয় সিংয়ের চূড়ান্ত করা ইলেক্টোরাল কলেজের তালিকায় তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে তৎকালীন রিটার্নিং অফিসার অনুমোদন করেছিলেন।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অজয় সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিএফআই-এর পূর্ববর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৮ মার্চ তারিখ নির্ধারিত হলেও, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আইনি জটিলতার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অজয় সিংয়ের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী কমিটি, যা বিশ্ব বক্সিং সংস্থার নির্দেশে গঠিত হয়েছিল, ২১ আগস্ট নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। তবে, এই নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অনুরাগ ঠাকুরের গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে যে অজয় সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিটি সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, যা জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন কোড, ২০১১-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এইচপিবিএ-র পক্ষ থেকে ঠাকুর এবং ভাণ্ডারীকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, এবং তারা দাবি করেছে যে ঠাকুর ২০০৮ সাল থেকে এইচপিবিএ-র সদস্য। তবে, অজয় সিংয়ের ৭ মার্চের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল যে শুধুমাত্র রাজ্য ইউনিটের নির্বাচিত সদস্যরাই নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন, এবং ঠাকুর এই যোগ্যতা পূরণ করেননি বলে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঠাকুরের গোষ্ঠী আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল, এবং দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে, মার্চ মাসে দিল্লি হাইকোর্টের একক বিচারপতির বেঞ্চ ঠাকুরের পক্ষে রায় দিয়েছিল, কিন্তু পরে ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ স্থগিত করে। ফলস্বরূপ, ঠাকুর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যেখানে বিষয়টি দিল্লি হাইকোর্টে পুনরায় বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়।
অনুরাগ ঠাকুরের গোষ্ঠী এখন দাবি করছে যে বিএফআই-এর সংশোধিত সংবিধান, যা বিশ্ব বক্সিং সংস্থার দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে, তা বিএফআই-এর কার্যনির্বাহী কমিটি বা সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়নি। তাদের মতে, এই সংশোধন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য করা হয়েছে, যা জাতীয় ক্রীড়া কোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বিতর্কের মধ্যেই, অজয় সিং তৃতীয় মেয়াদের জন্য সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা ২০১১ সালের জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন কোড অনুযায়ী তাঁর শেষ মেয়াদ হবে।
এই নির্বাচনে অনুরাগ ঠাকুরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল বিএফআই-এর নেতৃত্বের জন্যই নয়, ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। ঠাকুর, যিনি পূর্বে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি ছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাঁকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে অজয় সিংয়ের গোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের, যেমন হেমন্ত কালিতা এবং রাজেশ ভাণ্ডারীর, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশিত।
এই নির্বাচনের ফলাফল ভারতীয় বক্সিংয়ের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ব বক্সিং সংস্থার নির্দেশে গঠিত অন্তর্বর্তী কমিটি ৩১ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ পেয়েছে। তবে, আইনি জটিলতা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রক্রিয়াটি এখনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এইচপিবিএ-র প্রতিনিধি রাজেশ ভাণ্ডারী জানিয়েছেন, “আমরা আশাবাদী যে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু বিএফআই-এর নেতৃত্ব নির্ধারণই করবে না, বরং ভারতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলির স্বচ্ছতা এবং শাসনের ক্ষেত্রেও একটি নজির স্থাপন করতে পারে। আগামী ৭ আগস্ট দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) বৈঠকের পাশাপাশি, এই নির্বাচন ভারতীয় ক্রীড়া জগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে চলেছে।