ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর একের পর এক হেনস্তার অভিযোগ এবং রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন ঘিরে বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদের আবহে এবার দলের ভিতর থেকেই সুর বেঁধে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এই প্রেক্ষিতে তিনি ৮ আগস্ট জেলাস্তরের দলীয় সংগঠনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন। তবে সেই বৈঠকের দিন বদল করে তা ৫ আগস্ট করা হয়েছে।
দলের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি দলের জেলা সভাপতিদের, অঞ্চল ও ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। মূল উদ্দেশ্য, দলের অবস্থান ও রাজনৈতিক কর্মসূচি স্পষ্ট করা। ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্তা নিয়ে তৃণমূল যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, তা বারবার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরছে। পাশাপাশি, রাজ্যের মধ্যে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ সংশোধন’ ঘিরে শাসকদলের আশঙ্কা যে, এর পিছনে বিজেপির বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে— সে কথা বারবার তুলে ধরছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে অভিষেকের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে জেলার নেতাদের রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশও দেওয়া হতে পারে। দলের তরফে কোন কোন কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে, কোথায় কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, কোথায় কীভাবে জনমত তৈরি করতে হবে— তারও রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন অভিষেক।
তবে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের দিন পিছিয়ে আনার কারণ কী? দলের সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ আগস্ট দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে বিরোধী INDI জোট। সেই কর্মসূচিতে তৃণমূল কংগ্রেস অন্যতম শরিক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেখানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ওইদিন দলের ভার্চুয়াল বৈঠক করলে তা চাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পাশাপাশি অভিষেক নিজেও সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারতেন না। তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত হয়, ৮ আগস্ট নয়— দলীয় বৈঠক ৫ আগস্টই করা হবে।
এর আগেও তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের বৈঠকে অভিষেক দলীয় কর্মীদের বারবার বলেছিলেন, মানুষের পাশে থাকতে হবে। বিশেষত ভিনরাজ্যে বাঙালিদের যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এমনকি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উত্তরবঙ্গে সফরে গিয়ে শিলিগুড়িতে প্রতিবাদ মিছিল করার পরিকল্পনা করছেন বলেও সূত্রের খবর।
তবে শুধু হেনস্তা নয়, ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়েও এবার শাসকদল জোর দিচ্ছে জনসংযোগে। কারণ, তারা মনে করছে, নির্বাচন যত এগোবে, বিজেপি ততই ভোটার তালিকা নিয়ে কারচুপি করতে চাইবে। এই পরিস্থিতিতে বুথ স্তর থেকেই দলের কর্মীদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ৫ আগস্টের বৈঠক নিছকই নিয়মরক্ষার বৈঠক নয়। বরং এটি হতে চলেছে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সভা, যেখানে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই রণনীতি ঠিক করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই বৈঠকে কী বার্তা উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।