পুজো কমিটি গুলিকে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা অনুদান দিতে চলেছে রাজ্য সরকার (Tarun Jyoti)।দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদান নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি তার এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন এই ইস্যু নিয়ে।
তিনি এই অনুদানকে ‘ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার ঘুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, এই অনুদানের নামে সরকার ‘সর্বনাশের রাজনীতি’ চালাচ্ছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির কারণ। এই বিস্ফোরক মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি বলেছেন, “পুজো কমিটিগুলিকে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এটা কি সত্যিই অনুদান, নাকি ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার ঘুষ?” তিনি রাজ্য সরকারের আর্থিক দুরবস্থার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “সরকারের হাতে টাকা নেই।
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (DA) বন্ধ, চাকরির নিয়োগ বন্ধ, কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে আছে, হাসপাতালে চিকিৎসা মিলছে না, রাস্তাঘাট ও নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, আর রাজ্য ৭ লক্ষ কোটি টাকার ঋণে ডুবে আছে।
তবু এই সরকার ক্লাবগুলিকে লক্ষাধিক টাকা করে অনুদান দিচ্ছে। এই টাকা কোথা থেকে আসছে?”তিনি আরও জানান, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পুজোর জন্য দেওয়া অনুদান ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা ৯০০ শতাংশ বৃদ্ধি। এই বছর কেবলমাত্র ক্লাব অনুদানের পেছনে রাজ্য সরকারের খরচ ৪৭৩ কোটি টাকা।
তরুণ জ্যোতির প্রশ্ন, “এই বিপুল পরিমাণ টাকা সরকার কোথায় থেকে ধার করছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহার করে ক্লাবগুলিকে কেনা হচ্ছে, যাতে ভোটের সময় এই ক্লাবগুলিকে ‘গ্রাউন্ড ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।”শুধু অনুদানই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো কমিটিগুলির জন্য বিদ্যুৎ বিলে ৮০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা করেছেন।
তরুণ জ্যোতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (WBSEDCL) হয়তো এই ছাড় দিতে পারে, কিন্তু CESC একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা কেন এই ছাড় দেবে? উত্তর সহজ—এই টাকা সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ বিলে চাপিয়ে তুলে নেওয়া হবে।” তিনি এই নীতিকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এটা কি সত্যিই পুজোর জন্য, নাকি ক্ষমতা ধরে রাখার ছক?”
তরুণ জ্যোতি আরও উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো হতো, তখন সাধারণ মানুষ চাঁদা দিয়ে, পাড়ার মানুষ এক হয়ে পুজোর আয়োজন করত। “সেটা ছিল আমাদের সংস্কৃতি। কিন্তু আজ তা রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের করের টাকা, তাদের পরিশ্রমের টাকা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক বিনিয়োগে খরচ হচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গবাসী, এবার ভাবুন—এই খেলাটা কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের ভবিষ্যৎকে? নীরব থাকলে শুধু পুজো নয়, রাজ্যটাও বিক্রি হয়ে যাবে অনুদানের দামে।”এই অভিযোগ রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্ররা এই অভিযোগকে ‘বিরোধীদের ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তাঁদের দাবি, পুজোর জন্য অনুদান বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য দেওয়া হচ্ছে। তবে, বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে বিজেপি, তরুণ জ্যোতির অভিযোগের সঙ্গে একমত হয়ে এই নীতিকে ‘ভোট কেনার চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।সামাজিক মাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকে তরুণ জ্যোতির প্রশ্নের সমর্থন করে বলছেন, রাজ্যের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় বিপুল পরিমাণ টাকা পুজোর নামে খরচ করা অযৌক্তিক। অন্যদিকে, তৃণমূল সমর্থকরা দাবি করছেন, এই অনুদান পুজোর মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে।এই বিতর্ক আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন বাড়ল আরও ছয় মাস
তরুণ জ্যোতির অভিযোগ রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। জনগণের মধ্যে এই প্রশ্নও উঠছে, পুজোর মতো একটি সাংস্কৃতিক উৎসব কি সত্যিই রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে? এই ইস্যুতে সরকার কী জবাব দেয়, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।