আজকের দিনে উচ্চশিক্ষার খরচ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে এক প্রশংসনীয় উদাহরণ স্থাপন করেছে বিহার সরকার। রাজ্যের তরফ থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আন্ডার গ্র্যাজুয়েট (UG), পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (PG) এবং পিএইচডি (PhD) স্তরের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে মাসে মাসে ২ হাজার টাকা করে হাতখরচ বা ‘পকেট মানি’ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি, বছরে একবার ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র বই ও নোটবই কেনার জন্য।
বিহার অ্যানিমাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ সমস্ত কলেজেই এই সুবিধা মিলছে। বিহার ভেটেরিনারি কলেজের ডিন ডঃ জে কে প্রসাদ জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটির অধীনে থাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থী এই আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন নিয়মিত। এটি শুধুমাত্র একটি প্রকল্প নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার এক বড় উদ্যোগ।
কলেজ কর্তৃপক্ষের মতে, এই পকেট মানি এবং বই কেনার বরাদ্দ অনেক সময় বার্ষিক ফি-এর থেকেও বেশি হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ওপর শিক্ষাগত খরচের যে চাপ পড়ে, তা অনেকটাই হ্রাস পায়। এতে করে পরিবারগুলোরও আর্থিক দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। তারা নিশ্চিন্তে নিজেদের পড়াশোনায় মন দিতে পারে।
এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হল – কোনও মেধাবী ছাত্রছাত্রী যেন কেবল অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে না দেয়। রাজ্যের তরফে স্পষ্ট বার্তা, শিক্ষার অধিকার সবার, এবং তাতে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
বিহার সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধু আর্থিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, শিক্ষার প্রতি রাজ্যের ইতিবাচক মনোভাব এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। অন্য অনেক রাজ্যে যেখানে শিক্ষার্থীদের উপর ঋণের বোঝা চাপানো হয়, সেখানে বিহার সরকার তাদের সরাসরি মাসিক ভাতা এবং বই কেনার জন্য অতিরিক্ত সাহায্য প্রদান করে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।
এই প্রকল্পের সুফল ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক কর্তারাও বলছেন, এই আর্থিক সহায়তার ফলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে, পড়াশোনায় আগ্রহও বেড়েছে। তারা নিজেদের খরচ নিজে সামলাতে শিখছে, আত্মনির্ভরতার বীজ বপন হচ্ছে কলেজ জীবন থেকেই।
একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, “আগে মাসের শেষে কীভাবে চলব, সেটা একটা চিন্তার বিষয় ছিল। এখন সরকারের দেওয়া এই মাসিক পকেট মানি অনেক সাহায্য করে। বাড়ি থেকেও চাপ কমেছে।”
বই কেনার জন্য বার্ষিক ছয় হাজার টাকা প্রদান শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিরাট সুবিধা। অধিকাংশ পড়ুয়াই আগে পুরনো বই দিয়ে চালিয়ে নিতে বাধ্য হতেন। কিন্তু এখন নতুন বই, রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল, গাইড ইত্যাদি কিনে আরও গভীরভাবে পাঠ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।
বিহার সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অন্যান্য রাজ্যের কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। যেভাবে শিক্ষাকে সমানাধিকার ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা বর্তমান সমাজে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী।
এই প্রকল্প প্রমাণ করছে—সঠিক নীতিনির্ধারণ ও সদিচ্ছা থাকলে শিক্ষার প্রসারে বাস্তব পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভবিষ্যতের ভারত গড়তে এমন শিক্ষাবান্ধব পদক্ষেপ আরও বিস্তৃতভাবে প্রয়োজন।