প্রখ্যাত দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেতা প্রকাশ রাজ (Prakash Raj)। আজ হায়দ্রাবাদের বশিরবাগে অবস্থিত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) দফতরে অবৈধ অনলাইন বেটিং অ্যাপ প্রচারের সঙ্গে জড়িত একটি মানি লন্ডারিং মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হন। ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “এটি বেটিং অ্যাপের মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা, যা ২০১৬ সালে ঘটেছিল।
নৈতিক কারণে আমি এই বিষয়ে আর এগোইনি এবং ইডিকে জানিয়েছি যে আমি কোনও টাকা গ্রহণ করিনি।” প্রকাশ রাজের এই বক্তব্য এই মামলায় তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইডি গত ১০ জুলাই ২৯ জন সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার এবং ইউটিউবারের বিরুদ্ধে একটি এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট (ইসিআইআর) দায়ের করে, যারা অবৈধ বেটিং প্ল্যাটফর্ম যেমন জঙ্গলি রামি, জিতউইন, লোটাস৩৬৫ ইত্যাদি প্রচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত।
এই মামলা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) এবং পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭-এর অধীনে দায়ের করা হয়েছে। তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে দায়ের করা পাঁচটি এফআইআরের ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলো কোটি কোটি টাকার অবৈধ তহবিল সংগ্রহের জন্য অভিযুক্ত, যা বেআইনি জুয়া এবং বেটিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রকাশ রাজ ছাড়াও এই মামলায় অভিনেতা রানা দাগ্গুবতি, বিজয় দেবেরাকোন্ডা, মঞ্চু লক্ষ্মী, নিধি আগরওয়াল, প্রণীতা সুভাষ, শ্রীমুখী এবং আরও বেশ কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সারের নাম জড়িয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই সেলিব্রিটিরা এই অ্যাপগুলোর প্রচারের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এন্ডোর্সমেন্ট ফি গ্রহণ করেছিলেন। প্রকাশ রাজকে ৩০ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল, এবং তিনি নির্ধারিত সময়ে হায়দ্রাবাদের ইডি দফতরে হাজির হন।
ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে প্রকাশ রাজ সাংবাদিকদের বলেন, “২০১৬ সালে আমি একটি বেটিং অ্যাপের প্রচারের সঙ্গে সামান্যভাবে জড়িত ছিলাম। কিন্তু নৈতিকতার কারণে আমি এটি চালিয়ে যাইনি এবং ২০১৭ সালে এই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলাম। আমি ইডিকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে আমি এই কাজের জন্য কোনও টাকা নেইনি।”
তিনি আরও বলেন, তিনি ইডির তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেছেন। প্রকাশ রাজের দাবি, তিনি এই প্ল্যাটফর্মগুলোর অবৈধ কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং নৈতিক উদ্বেগের কারণে চুক্তি থেকে সরে আসেন।
এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, প্রকাশ রাজের বিরুদ্ধে এই তদন্ত তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, বিশেষ করে বিজেপি-বিরোধী অবস্থানের কারণে হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি পোস্টে বলা হয়, “প্রকাশ রাজ মোদী বিরোধী বলেই কি তিনি ইডির নজরে?”
তবে, ইডি স্পষ্ট করেছে যে এই তদন্ত কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং অবৈধ তহবিলের প্রবাহ এবং মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তের অংশ।ইডির পরবর্তী পদক্ষেপইডি জানিয়েছে, তারা এই মামলায় জড়িত সকলের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, চুক্তি এবং আর্থিক লেনদেনের নথি পরীক্ষা করছে।
রানা দাগ্গুবতি, বিজয় দেবেরাকোন্ডা এবং মঞ্চু লক্ষ্মীও আগামী দিনে ইডির সামনে হাজির হবেন। রানা দাগ্গুবতি ২৩ জুলাই হাজির হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি সময় চেয়ে নতুন তারিখ ১১ আগস্ট পেয়েছেন। বিজয় দেবেরাকোন্ডা ৬ আগস্ট এবং মঞ্চু লক্ষ্মী ১৩ আগস্ট হাজির হবেন।
এই মামলা অবৈধ বেটিং অ্যাপের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তেলেঙ্গানায় এই অ্যাপগুলোর কারণে আর্থিক ক্ষতি এবং এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের ঘোষণা করেছেন।
‘ইলেভেন’ লিখতে গিয়ে কুপোকাত শিক্ষক! সরকারি স্কুলে ক্লাসরুমের ভিডিয়ো ফাঁস
প্রকাশ রাজের ইডি দফতরে হাজিরা এবং তাঁর বক্তব্য এই মামলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও, ইডির তদন্ত এখনও চলছে, এবং আগামী দিনে এই মামলার আরও তথ্য প্রকাশ পেতে পারে। এই ঘটনা সেলিব্রিটিদের দ্বারা পণ্য বা প্ল্যাটফর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে নৈতিক ও আইনি দায়বদ্ধতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।