মণিপুরের (Manipur) একসময় সবুজে ঘেরা কৃষিজমিগুলি আজ ভয়াবহ নীরব। ২০২৩ সালের মে মাসে জাতিগত সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ক্ষেতগুলোতে ফসলের পরিবর্তে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও সন্দেহ। যে জমি একসময় রাজ্যের অর্থনীতিকে টেনে রাখত, তা এখন নো-ম্যানস-ল্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
রাজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জীবিকার জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। অথচ মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘাত মণিপুরের কৃষিক্ষেত্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ফসল তোলার সরঞ্জামের জায়গায় উঠে এসেছে বাঁধা, কাঁটাতার আর ভয়।
চুরাচাঁদপুর জেলার উজুংমাখং গ্রামে এই দুর্দশা প্রকটভাবে দৃশ্যমান। এক কৃষক জানালেন, প্রায় দুই বছর ধরে তিনি নিজের জমিতে ঢুকতে পারছেন না।
জানা যাচ্ছে, কৃষকের জমি দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও জমি বাফার জোনে থাকায় সেখানে চাষবাস করা সম্ভব নয়। কৃষকের কথায়, “অনেক ঘাস জমি দখল করে নিয়েছে। ছোট ছোট আগাছাগুলো ভেষজনাশক দিয়ে মুছে ফেলা যায়। এখন পর্যন্ত আমরা কোনও সাহায্য পাইনি, যা আমাকে খুবই হতাশ করে।”
উজুংমাখংয়ের ৩০টি পরিবারের হাতে প্রায় ১৫ হেক্টর জমি থাকলেও একটিও বর্তমানে আবাদযোগ্য নয়। ফলে জীবিকা ও খাদ্য উৎপাদন দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মণিপুরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিএসডিপি) প্রায় ২২ শতাংশই আসে কৃষি থেকে। ফলে জমি পতিত হওয়ায় রাজ্যের অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে পড়ছে।
মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডি অফ সোশ্যাল ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনক্লুসিভ পলিসি (সিএসএসআই)-এর সহযোগী অধ্যাপক ডঃ থিয়াম ভারত সিং রিপোর্ট করেছেন যে ৫,১২৭ হেক্টরেরও বেশি কৃষিজমি দুই বছর ধরে পতিত পড়ে আছে। তিনি বলেন, “এর ফলে ১৫,০০০ মেট্রিক টনেরও বেশি ধানের ক্ষতি হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে এত তীব্র হ্রাস জিএসডিপি-র উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। জাতিগত সংঘাত মণিপুরের কৃষিক্ষেত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সংঘাতের কারণে গড়ে ওঠা বাফার জোনে উভয় সম্প্রদায়ের কৃষকরাই অসহায়। একসময়ের উর্বর ক্ষেত এখন সংঘাতের চিহ্ন বহন করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং নিরাপত্তাহীনতাই কৃষিকাজের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও ভয়ের কারণে বীজ বোনা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মণিপুরের কৃষি ঐতিহ্য অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।
শান্তি ও বাস্তব সহায়তা না এলে হাজার হাজার কৃষক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হবেন। এর প্রভাব শুধু খাদ্য নিরাপত্তার উপর নয়, বরং মণিপুরের দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপরও পড়বে।