নয়াদিল্লি: বেআইনি অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্মে অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলায় গুগলের এক প্রতিনিধিকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED Grills Google)। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মেটা (ফেসবুকের মূল সংস্থা) এদিন তাদের প্রতিনিধি পাঠায়নি। তবে ইডি সূত্রের দাবি, মেটা এই তদন্তে সহযোগিতা করছে এবং সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ইডিকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
ইডির এক আধিকারিক জানান, “গুগলের এক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দিল্লির সদর দপ্তরে এসে ইডির তদন্তে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু নথিপত্র জমা দিয়েছেন। এই নথিগুলি মূলত গুগলের মাধ্যমে অনলাইন বেটিং অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রচারের সংক্রান্ত।” তবে এখনও পর্যন্ত গুগলের ওই প্রতিনিধির নাম প্রকাশ করেনি ইডি।
গুগল এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও, হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্ম নিরাপদ রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বেআইনি গ্যাম্বলিং বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করি। আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ও মানুষের দক্ষতা মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত করি যে, সব বিজ্ঞাপনই স্থানীয় আইন ও আমাদের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
সংস্থা আরও জানায়, “২০২৪ সালে ভারতে আমরা ২৪৭.৪ মিলিয়ন বিজ্ঞাপন মুছে ফেলেছি এবং ২.৯ মিলিয়ন অ্যাডভার্টাইজার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করেছি। আমরা তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে পুরোপুরি সহযোগিতা করছি।” উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই গুগল ও মেটাকে ইডি হাজিরার নোটিশ পাঠিয়েছিল, তবে দুই সংস্থাই অতিরিক্ত সময় চেয়েছিল।
ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, একাধিক অনলাইন বেটিং সংস্থা এবং মিডিয়া হাউস এই বেআইনি অ্যাপগুলির থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেছে। এমনকি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, অ্যাপ স্টোর এবং ওয়েবসাইটেও এই ধরনের বিজ্ঞাপন চলছে।
২০২৩ সালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক চারবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অ্যাডভার্টাইজিং প্ল্যাটফর্ম (যেমন গুগল ও ফেসবুক) ও সোশ্যাল মিডিয়াকে অনলাইন বেটিং বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলে।
তবুও দেখা যায়, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং ক্রীড়াজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বেরা এখনও এই অ্যাপগুলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হচ্ছেন। ইডি সূত্রের খবর, এই সেলেব্রিটিদেরও শীঘ্রই তলব করা হতে পারে।
তদন্তকারীরা জানান, নিষিদ্ধ হওয়া অনেক বেটিং অ্যাপ নতুন নাম নিয়ে আবার চালু হচ্ছে। সেগুলিকে জনপ্রিয় করতে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং তারকাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপগুলি কর ফাঁকি, মানি লন্ডারিং এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (FEMA) লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ।
ইডির হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ২২ কোটি মানুষ বিভিন্ন বেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, যার মধ্যে ১১ কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসেই বেআইনি বেটিং ওয়েবসাইটে ১.৬ বিলিয়নের বেশি ভিজিট হয়েছে।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, ভারতের অনলাইন বেটিং মার্কেট প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের, এবং প্রতিবছর এই অ্যাপগুলি প্রায় ২৭,০০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট ১,৫২৪টি বেআইনি বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপের বিরুদ্ধে ব্লকিং নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এই তদন্ত আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও ইডি চায়, এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চিরতরে বন্ধ করা হোক, এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।